• তিন দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ, জলকষ্টে ভুগছে গ্রাম
    এই সময় | ২০ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, খড়্গপুর: হঠাৎ ঝড়ে ক্ষতি হয়েছিল চাষের। ভেঙে পড়েছিল বাতিস্তম্ভ, ইলেকট্রিক পোস্টগুলি। দিন তিনেক আগে সেই ঘটনার পর থেকেই অন্ধকারে ডুবেছে গ্রাম। এলাকায় কোনও বিদ্যুতের সংযোগ নেই। ফলে মিলছে না পানীয় জলও। গরমের মধ্যে পানীয় জল না পেয়ে মানুষের নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে। আগে গ্রামগঞ্জে কুয়ো দেখা যেত। ছিল টিউবওয়েলও। কিন্তু জল প্রকল্পের পাইপ লাইন হওয়ার পর থেকেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে পানীয় জল। কৃষিকাজে ব্যবহৃত অগভীর নলকূপ থেকেই পানীয় জল সংগ্রহ করেন গ্রামের মানুষ।

    সোমবার রাতে হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক জায়গায়। তার জেরে খড়্গপুর মহকুমার কেশায়াড়ি, সবং, নারায়ণগড় ও খড়্গপুর গ্রামীণ ব্লকের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকশো ঘরের চাল উড়ে যায়। ভেঙে পড়ে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। তারপর থেকেই এলাকাগুলির এই অবস্থা।

    গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে কষ্ট করে থাকা যায়। কিন্তু এই গরমে পানীয় জল ও স্নানের জল না পেলে কী ভাবে চলে? গবাদিদের পুকুরে স্নান করিয়ে আনছি। ওই পুকুরের জল তো আর খাওয়া যায় না।’ মঙ্গলবার থেকে জলের হাহাকার দেখা গিয়েছে কেশিয়াড়ির গাইঘাটা, ডালকাটি, সাঁকলোবনি, রাঙামেটিয়া, বালিভাসা-সহ একের পর এক গ্রামে।

    বুধবার সকালে গাইঘাটা গ্রামে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর দু’ট্যাঙ্ক পানীয় জল পৌঁছে দেয়। হাঁড়ি, বালতি কলসি নিয়ে ছোটেন কৃষ্ণ মাহাতো, বংশীধর মাহাতো, শ্যামলী জানা, কাবেরী পালেরা। নিমেষে শেষ হয়ে যায় সেই জল। ঘৃতগ্রাম অঞ্চ‌ল তৃণমূলের সভাপতি গৌতম মাইতি বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য হাহাকার পড়েছে। পান করা, রান্নাবান্নারও জল পাচ্ছি না। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চালানো যাচ্ছে না।’ কেশিয়াড়ির জেলা পরিষদ সদস্য মামনি মাণ্ডি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরকে আরও বেশি করে পানীয় জল পাঠানোর জন্য বলেছি।

    না হলে খাজরা ও ঘৃতগ্রাম দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েকশো মানুষ পানীয় জল পাবেন না।’ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ আবু কালাম বক্স বলছেন, ‘চেষ্টা করছি, কী ভাবে আরও বেশি জল পাঠানো যায়।’

    মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিরকুনিয়া, ফুলগেড়িয়া, জ্যোতিরামপুর-সহ একাধিক গ্রামের একই অবস্থা। তালাডিহা গ্রামের এক বাসিন্দা অলোক চক্রবর্তী বাধ্য হয়ে জেনারেটর ভাড়া করে নলকূপ চালানোর ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে গ্রামের মানুষও জল নিয়ে যান। মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রণব বিজলি বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চলছে না। আমরা হ্যান্ড পাম্পগুলি দ্রুত ঠিক করার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু গরম পড়ে যাওয়ায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। ফলে পানীয় জলের সমস্যা বেড়েছে।’

    বিদ্যুৎ দপ্তরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রিজিওনাল ম্যানেজার প্রদীপ সামন্ত বলেন, ‘দ্রুত সব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। প্রায় ৪০০ অতিরিক্ত কর্মীকে কাজে লাগানো হয়েছে। কিছু জায়গায় নতুন করে খুঁটি হেলে পড়ার খবর আসায় এবং দু–এক জায়গায় মাঠে খুঁটি পড়ে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা কাজে বাধা দিয়েছেন। তাতে সামান্য দেরি হচ্ছে।’

    বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, সোমবার রাতে ঝড়ে প্রায় ২৫০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে। আরও ২০০টির মতো খুঁটি হেলে পড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, ‘মঙ্গলবার কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা গিয়েছিল। বিদ্যুৎ দপ্তর দ্রুত কাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার সর্বত্র বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমার আশা।’

  • Link to this news (এই সময়)