প্রত্যুষ চক্রবর্তী, আউশগ্রাম
অনুকূল আবহাওয়ায় এ বার আলুর উৎপাদন ভালোই হয়েছে। কিন্তু মাঠ থেকে আলু তোলার পরে তা হিমঘরে নিয়ে যেতে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। আলুবোঝাই লরি–ট্রাকের দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাতীয় সড়কে অপেক্ষা করতে হচ্ছে চাষিদের। কখন যে হিমঘরে আলু রাখার সুযোগ তাঁরা পাবেন তার জন্য রোদে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
রাত পার হয়ে গেলেও গাড়ি খালি করার সুযোগ মিলছে না। বুধবার গুসকরায় দেখা গেল, হিমঘরগুলোর সামনে জাতীয় সড়কের ধার দিয়ে আট–দশ কিমি আলুবোঝাই ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। কোনও চাষি টানা দেড়–দুই দিন ধরে অপেক্ষা করলেও তাঁদের গাড়ি খালি হচ্ছে না। এতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, জমি থেকে তোলার পর টানা রোদে পড়ে থাকলে পচে যেতে পারে আলু। এ বছর কোনও দুর্যোগ না থাকায় আলুর ফলন বেশ ভালো। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম এবং ভাতার, এই তিন এলাকায় এ বার আলুচাষ ভালো হয়েছে।
ওয়েস্টবেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের গুসকরা ইউনিটের সভাপতি বনবিহারী ঘোষ বলেন, ‘এ বছর বেশির ভাগ চাষি মাদারসিড বীজ জমিতে ব্যবহার করায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। জেলার মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, ভাতারে গত বছর ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছিল। এ বছর ওই জায়গায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তা ছাড়া বাইরে আলু যাচ্ছে না, আলুর দাম নেই। মাঠে আলু কেনার লোক নেই। তাই চাষিরা হিমঘরে আলু রাখতে চাইছেন। এতেই জটিলতা বেড়েছে।’
এর সঙ্গে রয়েছে শ্রমিকের সমস্যাও। পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও বীরভূম জেলার একাংশের কৃষকরা গুসকরার বিভিন্ন হিমঘরে আলু রাখতে আসেন। এখানে শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে আট থেকে দশটি হিমঘর। এই হিমঘরগুলিতে ভাড়া দিয়ে আলু রাখার পর চাষিরা বাজারদর বুঝে তা বিক্রি করে দেন। তাতে কিছু টাকা লাভের মুখ দেখেন চাষিরা। তাই আলু ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হিমঘরে আলু রাখতে প্রতিবছরই ভিড় থাকে।
তবে এ বার ভিড় অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি। কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, গুসকরা ও সংলগ্ন এলাকার হিমঘরগুলির সামনে আলুবোঝাই গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ট্র্যাক্টর, পিক–আপ ভ্যান, মোটরচালিত ভ্যান, ছোট লরি ভাড়া নিয়ে আলু রাখতে এসেছেন চাষিরা। চাষি দীনবন্ধু ঘোষ, সুফল মণ্ডলরা বলেন, ‘সারাদিন তো বটেই, রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যাচ্ছে হিমঘরে আলু রাখতে গিয়ে।’
চাষি পার্থ দাসের কথায়, ‘হিমঘরে আলু রাখতে গেলে কবে বাড়ি ফিরব জানি না। আলু খালি করতে হিমশিম খাচ্ছি। খুবই সমস্যা।’ একই কথা চাষি শঙ্কর মিত্রের। তিনি বলেন, ‘মাঠে আলু কেনার লোকও নেই, দামও নেই। তাই বাধ্য হয়েই হিমঘরে রাখতে হচ্ছে।’ চালকদের অবস্থাও শোচনীয়। ট্র্যাক্টরচালক শেখ সবুর বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে আলু রাখতে। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হচ্ছে।’
হিমঘর মালিকরা জানাচ্ছেন, ভিড়ের কারণেই চাষিদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই সমস্যার চটজলদি সমাধানের কোনও রাস্তা নেই। আউশগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা হিমঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি যাতে চাষিদের হয়রানির শিকার না হতে হয়।’