বর্ধমানের কাটোয়া-১ ব্লকের গিধগ্রামের শিব মন্দিরে প্রবেশাধিকার ছিল না চর্মকার সম্প্রদায়ের মানুষের। স্থানীয়দের উদ্যোগে বদলায় সেই রীতি। নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের পালিতবেঘিয়ার বৈরামপুর গ্রামের শিব মন্দিরেও ছিল একই নিয়ম। মন্দিরে প্রবেশাধিকার ছিল না তফসিলি জাতিভুক্তদের। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুযোগ পেলেন তাঁরা। পুলিশি নিরাপত্তায় মন্দিরে পুজো দিতে পেরে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।
শিব মন্দিরে প্রবেশাধিকার চেয়ে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ ছিল, দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি জাতিভুক্তদের লোকজনদের ওই মন্দিরে ঢুকতে বাধা দিতেন সেবায়েতরা। এখানকার রজক বা ধোপা সম্প্রদায়ের মানুষকে গাজনে অংশ নিতে দেওয়া হয় না বলে আদালতে জানান মামলাকারী। পুজো করার অধিকার থেকেও দিনের পর দিন বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দু’দিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
এ দিন কৃষ্ণনগর পুলিশের উপস্থিতিতে বঞ্চিত নিম্নবর্ণের মানুষদের পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি, পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামের দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হয়। ওই আলোচনা সদর্থক হয় বলেও জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রামীণ উত্তম ঘোষ জানান, গত দু’দিন আগেই কলকাতা হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্তাকে রিপোর্ট দিতে বলেছিল। সেইমতো গ্রামের দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়। সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে উভয় বর্ণের মানুষ স্থানীয় শিব মন্দিরে পুজো দিতে পারবেন। এমনকী আগামী চৈত্র মাসের গাজনেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
মন্দিরে ঢুকতে পেরে অত্যন্ত খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। যতীন দাস বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামে শুধুমাত্র হিন্দুদের বসবাস থাকলেও প্রায় সাত পুরুষ ধরে নিম্নবর্ণের মানুষজনকে মন্দিরের পুজো দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়। আমরা অত্যন্ত খুশি।’ পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘অবশেষে সাধারণ মানুষের জয় হলো। আমরা চেয়েছিলাম মন্দিরে যাতে নিচু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো পুজো দিতে পারে।’