• ওয়ার্ল্ড স্প্যারো দিবসে পাচারের চড়াই উদ্ধার করল পুলিশ
    এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৫
  • প্রত্যুষ চক্রবর্তী, আউশগ্রাম

    সকালবেলার রোদ্দুর যেই মাটিতে পা ফেলছে, একটা চড়াই অমনি দেখি এক্কা দোক্কা খেলছে.....

    নয়ের দশকে কবীর সুমনের জনপ্রিয় এই গান লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু, ওই সময়ের থেকে ৩০ বছর এগিয়ে আজ কি কোনও গানে এমন লাইন লেখা সম্ভব? সম্ভবত না। কারণ, চড়াই পাখিই তো আর দেখা যায় না। গৃহস্থের চারপাশে ঘুরঘুর করা চড়াইয়ের কিচিরমিচির আজ দুর্লভ।

    সেই চড়াই নিয়ে ২০ মার্চ পালিত হয় ওয়ার্ল্ড স্প্যারো ডে। আর এই দিনেই আউশগ্রামে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করল ৬০টি চড়াই পাখি। পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে পাখিগুলোকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছেন বন দপ্তরের কর্মীরা।

    পরিবেশ থেকে চড়াই কমে যাওয়ার মাশুল চিনকে গুনতে হয়েছিল জানিয়ে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ হীরক নন্দী জানাচ্ছেন, ১৯৫৮ সালে শস্যের ক্ষতি কমাতে ইঁদুর, মাছি, মশার সঙ্গে চড়াই নিধনের ডাক দিয়েছিল দেশটি। তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছিল চিনে। ব্যাপক ভাবে চড়াই পাখি মেরে ফেলার কারণে ক্ষতিকারক পোকার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। সেই পোকা শেষ করে করে দিয়েছিল মাঠের পর মাঠ উৎপাদিত শস্য। তার জেরে মন্বন্তরের মুখে পড়ে বিপুল প্রাণহানি ঘটেছিল চিনে। হীরক বলছেন, ‘ওই দেশের সরকার সরকারি ভাবে দেড় কোটি মানুষের মত্যুর কথা জানিয়েছিল। যদিও ওই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বিদেশ থেকে চড়াই আমদানি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ নিতে হয়েছিল চিনকে। আসলে চড়াই নিধন ব্যাকফায়ার করেছিল।’

    আমাদের চারপাশ থেকে কেন হারিয়ে যাচ্ছে চড়াই? আগের মতো কেন দেখা যায় না ছোট্ট পাখিগুলোকে? এ প্রসঙ্গে হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা পাখি বিশেষজ্ঞ দেবদুলাল চন্দ্র বলেন, ‘আজ কোনও বাড়িতে ঘুলঘুলি নেই। আমরা ওদের বাসা করতেই দিচ্ছি না। বড় বড় বহুতল উঠছে। সেখানে ঘুলঘুলি বা তেমন কোনও জায়গা নেই। ফলে ওরা হারিয়ে যাচ্ছে।’ তা হলে কি চড়াই লোপ পেয়ে যাচ্ছে? দেবদুলাল বলেন, ‘সাঁতরাগাছি বা শহরতলির কোনও বস্তি এলাকায় কিন্তু ওদের দেখা যায়। আসলে ওই সব বসতিতে টালির ছাদ, ত্রিপলের নীচে ওরা বাসা বাঁধার উপযুক্ত জায়গা পাচ্ছে। ফলে শহরে না থাকলেও শহরতলির কিছু বিশেষ জায়গায় চড়াই রয়েছে।’

    বৃহস্পতিবার ভোরে আউশগ্রামের আলিগ্রাম থেকে ৬০টি চড়াই পাখি উদ্ধার করে গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ। জানা গিয়েছে, এ দিন কয়েকজন ব্যক্তি আলিগ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে যেতে দেখে পুলিশের টহলরত ভ্যান। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ এগিয়ে যেতেই ওই ব্যক্তিরা সঙ্গে থাকা পাখির খাঁচা ফেলে চম্পট দেয়। এর পরেই ওই খাঁচা থেকে ৬০টি পাখি উদ্ধার করে পুলিশ। গুসকরা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার লক্ষ্মণ কারক বলেন, ‘আমরা পাখিগুলোকে গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছি। পাখিগুলো সুস্থই ছিল। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে জল ও খাবার দিয়ে ওদের প্রকৃতিতে ছেড়ে দিয়েছি।’ পুলিশ জানিয়েছে, কোথা থেকে ওই পাখিগুলোকে আনা হচ্ছিল, এর পিছনে কী উদ্দেশ্য তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)