আগামী অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) বাজেট খরচ এবং চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-২৫) হওয়া বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ সম্মিলিত তহবিল (কনসলিডেটেড ফান্ড) থেকে খরচের প্রস্তাব পাশ করল রাজ্য বিধানসভা। তবে রাজ্যের ঊর্ধ্বমুখী ধারের পরিমাণ নিয়ে সরব বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিধানসভায় দাবি করেছেন, আগামী বছর ধারের হার বাড়বে মাত্র ২.৮১%। যা রয়েছে সীমার মধ্যেই। বিধানসভায় বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদের মধ্যে এই সূত্রে চন্দ্রিমা ফের অভিযোগ করেন, নির্ধারিত বরাদ্দ দিচ্ছে না কেন্দ্র। তৈরি করা হচ্ছে আর্থিক প্রতিরোধ।
চলতি আর্থিক বছর শেষ হবে ৩১ মার্চ। কিন্তু এই বছরের বাজেট-খরচের যা অনুমান ছিল, তার থেকে প্রায় ২০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করেছে রাজ্য। নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত এই খরচের অনুমোদন দোল উৎসবের আগেই বিধানসভায় পাশ করিয়েছিল রাজ্য। এ বার অতিরিক্ত সেই খরচ যে সরকারের সম্মিলিত তহবিল থেকেই করা হবে, এ দিন তা-ও পাশ করানো হল। চন্দ্রিমা বিধানসভায় জানান, সমগ্র শিক্ষা অভিযানে প্রায় ৩৬২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে রাজ্যের। লক্ষ্মীর ভান্ডারে তা ৮৩১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে ২১৮১ কোটি, গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো খাতে ১৮৮ কোটি, বিচার বিভাগের প্রশাসনিক খাতে ১৮৭ কোটি, নির্বাচনে ৪০৭ কোটি, জল জীবন মিশনে ১৩৯৮ কোটি, অঙ্গনওয়াড়িতে ২৭২ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। রয়েছে আরও বেশ কিছু খরচও। এই সূত্রে চন্দ্রিমার অভিযোগ, “কেন্দ্রের টাকা আসেনি। অর্থনৈতিক বঞ্চনা করে আর্থিক প্রতিরোধ তৈরি করা হচ্ছে।” তাঁর সংযোজন, “প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনায় প্রথম শিশুর জন্মগ্রহণে পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয় সন্তান কন্যা হলে আরও ছ’হাজার টাকা পাওয়ার কথা মায়ের। ১৮ ফেব্রুয়ারি চালু হলেও, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে তার বরাদ্দ বন্ধ। যদিও রাজ্যে প্রায় ৪.২৫ লক্ষ মা-উপভোক্তার যাচাই হয়ে গিয়েছে। বরাদ্দের ৬০%-এর হিসাবে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বকেয়া হচ্ছে।” চন্দ্রিমার বক্তব্যের আগেই বিধানসভার কক্ষে বিরোধীরা প্রতিবাদ করতে থাকেন। পরে তাঁরা কক্ষত্যাগ করেন। চন্দ্রিমা পাল্টা বলেন, “গত চার বছরে একটাও গঠনমূলক আলোচনায় যোগ দেননি বিরোধীরা।”
দ্বিতীয় ধাপে নতুন আর্থিক বছরের জন্য সরকারের বাজেট-খরচ সম্মিলিত তহবিল থেকেই নেওয়ার প্রস্তাব পাশ করে বিধানসভা। সেই বছর সব মিলিয়ে প্রায় ৩.৮৯ লক্ষ কোটি টাকা খরচের অনুমান রেখেছে রাজ্য। ২০২৪-২৫ (চলতি) বছরে তা ছিল প্রায় ৩.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা।
এ দিন ঋণ করার আইন (ফিসকাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট বা এফআরবিএম) সংক্রান্ত তথ্যও বিধানসভায় পেশ করে রাজ্য। তাতে নতুন আর্থিক বছরের জন্য ৮১ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা ধার করার পথ খোলা রেখেছে তারা। চন্দ্রিমা জানান, এ বছরের তুলনায় তা মাত্র ২.৮১% বেশি। রাজ্যের রাজস্ব বাড়বে বলে অল্প হারে ধারের অনুমান বাড়ানো হয়েছে। ২০২৫-২৬ বছরের বাজেটে মোট ২.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছে রাজ্য। তার মধ্যে রাজ্যের একেবারে নিজস্ব আয় ১.১২ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে বলে আশা নবান্নের। সেই আয়ের মধ্যে রাজ্যের জিএসটি বাবদ প্রায় ৪৯,৭৭১ কোটি, আবগারিতে ২২,৫৫০ কোটি, বিক্রয় করে (প্রধানত পেট্রল-ডিজ়েল) ১৩,৯০৫ কোটি, স্ট্যাম্প-রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১০,০৯৯ কোটি টাকা আশা করছে রাজ্য সরকার।
বিধানসভায় যে তথ্য সরকার পেশ করেছে, তাতে ২০২৯-৩০ আর্থিক বছর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের (জিএসডিপি) ৩% ধার নেওয়ার সীমা বেঁধে দিয়েছে নবান্ন। জিএসডিপি-র সঙ্গে ঋণের হার ওই বছর পর্যন্ত ধরা রয়েছে ৩৮%-এ। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত যে ০.৫% ঋণ নেওয়ার সুবিধা রাজ্য পেত (এই সুবিধা শুরু হয়েছিল ২০২১-২২ থেকে), তা এ বছরই শেষ হচ্ছে। সেটাও বিধানসভায় এ দিন পাশ করিয়েছে রাজ্য।