এই সময়: কথায় কথায় বিজেপির পরিষদীয় দলের বিধানসভা অধিবেশন বয়কট করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন না চাকদহের বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষ। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘বিধানসভায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনায় আমাদের না–থাকাটা ভুল হয়েছে। আগামী দিনে এ নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে।’ তাঁর এই ‘উপলব্ধি’ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। সরাসরি বঙ্কিমের নাম উল্লেখ না–করে তাঁর এই অবস্থানের প্রশংসা করেছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ে বারুইপুরে হামলার অভিযোগ তুলে ঘটনাচক্রে এ দিন বিজেপি বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন এবং বিধানসভার গেটের বাইরে স্পিকারের কুশপুতুল পোড়ান। তাতে অবশ্য সামিল হয়েছিলেন বঙ্কিমও।
বিধানসভায় তাঁদের বলতে দেওয়া হয় না, প্রতিবাদ করলে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়— এই অভিযোগ তুলে বুধবার শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বারুইপুর পশ্চিমে ‘অভিযান’ করেন। যা নিয়ে কার্যত ধুন্ধুমার বেধে যায়। বারুইপুরে ঢোকার মুখে বিজেপি বিধায়কদের কালো পতাকা দেখান বারুইপুরের তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা। শুভেন্দুর কনভয়ে হামলা চালানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। তার রেশই বৃহস্পতিবার পড়ে বিধানসভায়।
এ দিন বিধানসভায় অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই বারুইপুরের ঘটনা নিয়ে সরব হন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন চলাকালীন ওয়েলে নেমে বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। তার পর ওয়াকআউট করে বিধানসভার গেটের বাইরে কালো কাপড় নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা।
পোড়ানো হয় স্পিকারের কুশপুতুল। বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘স্পিকারের কেন্দ্রে বিরোধী দলনেতার গাড়িতে হামলা হয়েছে। তাই, আমরা বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।’বারুইপুরে বুধবারের ঘটনা প্রসঙ্গে এ দিন বিধানসভায় স্পিকার বলেন, ‘আমার বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে যে সব করা হয়েছে, তা দুভার্গ্যজনক। আশা করব বিরোধীরা ভবিষ্যতে সংযত হবেন।’
বারুইপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের ভর্ৎসনা করেন। তাঁর কথায়, ‘বিরোধীরা বার বার বিধানসভাকে অচল করতে চেয়েছে। আসলে যিনি বিরোধী দলকে পরিচালনা করছেন, তিনি প্রচারে থাকতে ভালোবাসেন। দলবল নিয়ে ওঁরা স্পিকারের বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, এটা ঠিক নয়। কারও বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো ঠিক নয়।’
শুভেন্দুর কনভয়ে হামলার অভিযোগ তুলে বারুইপুর–সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এ দিন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিজেপি।
বিধানসভায় বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল বিধায়করা প্রশ্ন তুলবেন, সেটা প্রত্যাশিত। কিন্তু বিজেপির বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে তাদের দলেরই বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের মন্তব্য। এ দিন সংবাদমাধ্যমে বঙ্কিম বলেন, ‘বিরোধীদের দায়িত্ব, বিধানসভায় মানুষের কথা বলা। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সময়ে আমরা বিধানসভা বয়কট করলাম। বিধানসভায় থেকেই আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।
কথায় কথায় বিধানসভা বয়কট করা ভুল হচ্ছে।’ চাকদহের দলীয় বিধায়কের এই অবস্থান ভালো ভাবে নিচ্ছে না বিজেপির পরিষদীয় দল। যদিও বঙ্কিমের দাবি, এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। বিধানসভায় বিজেপির সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘পরিষদীয় রাজনীতিতে ব্যক্তিগত মত প্রকাশ্যে বলা সঙ্কীর্ণতা।
বিধানসভায় বিরোধীদের বলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলেই আমরা বিধানসভা থেকে বেরিয়ে মানুষকে আমাদের কথা বলছি।’ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বঙ্কিমের নাম উল্লেখ না–করে বিজেপির ওয়াকআউট প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাইরে একজন এই বিষয়টিকে সমর্থন করেননি বলে শুনেছি। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’