• নতুন করে ফরেস্টের আগুনের গ্রাস এড়াতে অ্যালার্ট দমকলকে
    এই সময় | ২১ মার্চ ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ, মালবাজার

    জঙ্গলে আগুনের লেলিহান শিখা, দূর থেকে আসা কালো ধোঁয়ায় যেন ঢেকেছে আকাশ। পুড়ছে একের পর এক সবুজ বনাঞ্চল। এই দাবানল রোধ করতেই এ বারে দমকল কেন্দ্রগুলিকে আগে থেকে সতর্ক করে কোমর বাঁধতে চাইছে বন দপ্তর। দমকল কেন্দ্রগুলি চিহ্নিত করে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় কার্যত কখন ‘রেড অ্যালার্ট’ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা বোঝাচ্ছেন বন আধিকারিকরা।

    উত্তরের কালিম্পং ছুঁয়ে জঙ্গল পাকদণ্ডি বেয়ে জলপাইগুড়ি জেলায় নেমে এসেছে। বিভিন্ন বিভাগ, বিভিন্ন রেঞ্জে বিভক্ত নানা জঙ্গলের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও আগুন লাগার সম্ভাবনা কোথায় বেশি তা–ই এখন আগে থেকে খতিয়ে দেখতে চাইছে বন দপ্তর।

    পাহাড়ি রুখা–সুখা এলাকায় কালিম্পং বন বিভাগের প্রচুর জঙ্গল রয়েছে। যার একটা বড় অংশ নেওড়াভ্যালি বনাঞ্চলের ভিতরে পড়ে। এই বিরাট বনাঞ্চল জুড়ে বড় দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগেই যাতে তা নেভানো যায়, তা নিয়ে কালিম্পং দমকল কেন্দ্রের সঙ্গে ইতিমধ্যেই জরুরি বৈঠক সেরে তাদের রেড অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।

    এ বারে কালিম্পং–এর তুলনামূলক লোয়ার ফরেস্ট এলাকায় আগুন নেভানোর কাজে মালবাজার দমকল কেন্দ্রকেও যাতে কাজে লাগানো যায়, তার জন্য তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে চলেছে কালিম্পং বন বিভাগ। বন বিভাগের ডিএফও চিত্রক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘ছোট ধরনের আগুন আমাদের বনকর্মীরাই নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। তাই আগে থেকেই দমকল কেন্দ্রগুলিকে সতর্ক করার কাজ শুরু করেছি।’

    ছোট ধরনের আগুন বনকর্মীরাই নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না। তাই আগেই দমকল কেন্দ্রগুলিকে সতর্ক করছি

    চিত্রক ভট্টাচার্য, ডিএফও

    এখন খর চৈত্র মাস চলছে। ছোট ছোট নদী, ঝোরায় জলের রেখা মলিন হয়ে শুধু জল বয়ে যাওয়ার দাগটুকু রয়েছে। ঘাস, গাছপালা, জঙ্গলে সবুজ আভা হারিয়ে ক্রমশ রুক্ষ হয়ে উঠছে। চারদিকে প্রকৃতির এই শীর্ণতায় স্বভাবতই শ্রী হারিয়েছে উত্তরের জঙ্গলগুলি। চিন্তা বাড়াচ্ছে শুকিয়ে আসা নদী।

    আগুন নেভানোর জন্য যে প্রচুর জলের জোগান চাই, তা কোথা থেকে মিলবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। উত্তরের পাহাড়ি নদীগুলির জল কার্যত এক গোড়ালিতে এসে ঠেকেছে।

    অভিযোগ, অবৈধ ভাবে অনেক চা–বাগান পুকুরের মতো বাঁধ বানিয়ে নদীগুলিকে নিজেদের এলাকায় আটকে, পাম্প সেট দিয়ে জল তুলে বাগানে সেচের কাজে লাগাচ্ছে। এ ছাড়াও সার্বিক ভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে শুষ্কতা বাড়ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

    পরিবেশকর্মী শ্যামাপ্রসাদ পান্ডের অভিযোগ, ভূগর্ভস্থ জল অত্যধিক মাত্রায় উন্নত মোটর ও সাবমার্সিবল জাতীয় পাম্প দিয়ে গৃহস্থ বাড়িতেও তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাই জঙ্গল লাগোয়া এলাকার জলস্তর নেমে যাওয়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়।

  • Link to this news (এই সময়)