সবে সন্ধ্যে নেমেছে। আজান শেষে রোজা ভেঙেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। ইফতার সেরে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার একটি চায়ের দোকানে আড্ডা জমিয়েছেন আব্বাস, গোলাপ শেখরা। খেলা, রাজনীতি খবর নিয়ে তখন তুফান উঠেছে চায়ের কাপে। এর মাঝেই এক বন্ধুকে ছুড়ে দেওয়া হলো বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সেই বন্ধু ‘ডেয়ার’ চ্যালেঞ্জ জিতে কড়কড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। অনাবিল বন্ধুত্বের আনন্দের সঙ্গে এই ঘটনার সাক্ষী থাকল হরিহরপাড়া।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বাসিন্দারা স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারছিলেন। আসরে ছিলেন পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক গোলাপ শেখ, স্থানীয় ভ্যান চালক আব্বাস আলি। দুই বন্ধুর মধ্যে খোশগল্পের মাঝেই গোলাপ আব্বাসকে একটি চ্যালেঞ্জ করে বসেন। ৫০ কেজি ওজনের কাঠের গুঁড়ো বোঝাই একটি বস্তা মাথায় করে ৮ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হবে। তা হলেই মিলবে নগদ ৪ হাজার টাকা। আব্বাস জানিয়ে দেন, ‘চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড’।
৫০ কেজি ওজনের বস্তা মাথায় নিয়ে তাজপুরের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করেন আব্বাস। এমন অবস্থায় তাঁকে হাটঁতে দেখে রাস্তার ধারে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় লোকজন। শুরু হয় হইহুল্লোড়। আব্বাসকে উৎসাহ দিতে শুরু করেন অনেকেই। বন্ধুর দেওয়া চ্যালেঞ্জ জিততে আব্বাসও বুঝিয়ে দেন ‘হাম কিসিসে কম নেহি!’
তবে চ্যালেঞ্জ ছিল হাঁটতে হবে আট কিলোমিটার। নেহাত কম নয়। হাঁটতে হাঁটতে কাহিল হয়ে পড়েন আব্বাস। তবুও সে নাছোড়বান্দা। চ্যালেঞ্জ তাঁকে জিততেই হবে। আর্থিক পুরস্কার তো গৌণ, বন্ধুকে চ্যালেঞ্জে হারানোটাই তখন পাখির চোখ আব্বাসের। দাঁতে দাঁত চেপে আট কিলোমিটার পথ হেঁটেও নেন আব্বাস। নিশ্চিন্তপুর পৌঁছতেই রাজ্য সড়কের মাঝ রাস্তায় বস্তা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাসপ্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। হেরে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন প্রিয় বন্ধু গোলাপ।
কথা দিয়ে কথা রাখেন তিনি। চ্যালেঞ্জ হেরে গিয়ে আব্বাসের হাতে তুলে দেন নগদ ৪ হাজার টাকা। ক্লান্তির মাঝেও হাসি ফোটে আব্বাসের মুখে। বন্ধুত্বের মজাদার পর্বের সাক্ষী থাকে গোটা এলাকা।