• পথেই পড়ে রইল মায়ের দেহ, এগিয়ে এল না কেউ
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়: অমানবিক!

    সংজ্ঞাহীন মাকে নিয়ে ১১ বছরের মেয়ে রাস্তায় বসে। দেখলেন অনেকেই। অভিযোগ, এগিয়ে এলেন না কেউ। একা মেয়ে রাস্তায় বসে চিৎকার করে কাঁদলেও তাতে মন গলেনি কোনও ‘মানুষ’–এরই! তার বাবা ছুটে বেড়ালেন একটা গাড়ি জোগাড় করতে। কিন্তু, কেউ বাড়িয়ে দিলেন না সাহায্যের হাত। ফল! পথেই, মেয়ের কোলে মাথা রেখে মারা গেলেন ৪৫ বছরের জাহেরা বিবি। অমানবিকতার এই কদর্য রূপের সাক্ষী রইল নদিয়ার কৃষ্ণনগর। শুক্রবার সকালে।

    হাসপাতাল ছিল ঢিল ছোড়া দূরত্বে। তারপরেও মিলল না চিকিৎসা। মৃত্যুর পরেও বদলায়নি ছবিটা। টাকার অভাবে শববাহী গাড়ি মেলেনি সেই মেয়ে ও তার বাবা নুর ইসলাম মণ্ডলের। মায়ের দেহ নিয়ে রাস্তার ধারে ঘণ্টা দুয়েক বসে ছিল মেয়েটি। শেষে একটি ইঞ্জিনভ্যান পেলে তাতে জাহেরার দেহ তুলে নিয়ে ৪০ কিলোমিটার দূরের বাড়ির পথ ধরে তারা। আশপাশের বেশিরভাগ মানুষ শুধু দর্শক হয়ে উপভোগ করে সেই দৃশ্য।

    অভিযোগ উঠেছে, বাসে করে আসার পথে বাসে বমি করতে শুরু করেন জাহেরা। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে নিয়ে নুর ও মেয়ে নেমে পড়ে বাস থেকে। রাস্তার পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় জাহেরাকে। অভিযোগ, মেয়েকে পথের ধারে অসুস্থ মা–কে নিয়ে বসে থাকতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে জাহেরাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি কেউ। প্রশ্ন উঠেছে, নিজেরা এগিয়ে না এলেও স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশকে তো খবর দেওয়া যেত! দিলেন না কেন?

    জানা গিয়েছে, জাহেরার কিডনির সমস্যা ছিল। নুর জানান, জমি বিক্রি করে নিয়মিত ডায়ালিসিস করা হচ্ছিল তাঁর। শুক্রবারও ডায়ালিসিসের জন্যই সকাল ৯টা নাগাদ তেহট্টর তরণীপুরের বাড়ি থেকে মেয়ের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন নুর ও জাহেরা। বেসরকারি বাসে করে আসছিলেন কৃষ্ণনগরে পালপাড়ায় একটি নার্সিংহোমে। সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর শহরে ঢোকার মুখে অসুস্থতা বাড়ে জাহেরার। তার একটু পরে মা–বাবা ও মেয়েকে নিয়ে কৃষ্ণনগর-করিমপুর পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে নেমে পড়েন নুর।

    প্রায় অচেতন জাহেরাকে নিয়ে তাঁরা কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভিড় জমিয়েছিলেন পথচলতি মানুষ। কিন্তু, অসহায় মেয়ে ও বাবাকে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ও ভাবেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে রাস্তায় পড়ে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়েন জাহিরা।

    মায়ের ওই অবস্থা দেখে মেয়ের চিৎকার-আর্তনাদে ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসেন দুই আশাকর্মী। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেন ততক্ষণে সব শেষ। এ বার! কয়েকজন তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানানোর পরামর্শ দিয়ে মানে মানে সরে পড়েন। মায়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে স্থানীয় একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেই ব্যক্তি গাড়ির জন্য দু’হাজার টাকা চান। তাঁদের কাছে কোথায় এত টাকা!

    কয়েকজন ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে একটি ইঞ্জিনভ্যান জোগাড় করেন। ৫০০ টাকায় রফা হয়। তাতেই মায়ের মরদেহ চাপিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ৪০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের দিকে রওনা দেয় মেয়ে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘পথচলতি লোকেদেরই এগিয়ে আসা উচিত ছিল।’ শহর তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ দত্ত বলেন, ‘এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা হলে নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)