মালদা শহরের বুকে লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এমনকি ট্রেনি স্টাফদের দিয়েই চলছিল রক্তের পরীক্ষা। এই অভিযোগ ওঠার পর অবশেষে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিল করল ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেইল্যান্স টিম। একই সঙ্গে রোগীর আত্মীয়দের ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানোর একটি চক্রও সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্স চালকের সঙ্গে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের গোপন আঁতাঁতের বিষয়টিও সামনে এসেছে। মালদা মেডিকেল কলেজে রেফার করা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার সেই চক্রের হদিশ মিলল। ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেইল্যান্স টিম এমনই একজন রোগীকে নার্সিংহোম থেকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেলে ভর্তি করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গাজোলের এক ব্যক্তি শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে সেখানকার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাঁকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেন। সেই মতো রোগীর পরিবারের লোকজন অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ অ্যাম্বুল্যান্স চালক উন্নত চিকিৎসার টোপ দিয়ে গৌড়কন্যা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে রোগীকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর প্রথম দেখেন চিকিৎসকরা। এর পাশাপাশি তেমন কোনও চিকিৎসা না করেই ১ লক্ষ টাকা বিল বানিয়ে ফের মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু টাকা মেটাতে না পারায় ওই রোগীকে না ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তার পর ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেইল্যান্স টিম ওই রোগীকে উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে।
ঘটনা নিয়ে মালদা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক শেখ আনসার আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা কিছুদিন ধরেই বেশ কিছু অভিযোগ পাচ্ছিলাম। সেই মতো শহরের একটি নার্সিংহোমে অভিযান চালানো হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় গাজলের এক রোগী ভর্তি থাকলেও তাঁর কোনও চিকিৎসা করা হয়নি। কিন্তু চিকিৎসার নাম করে এক লক্ষ টাকা বিল করেছে। জানতে পারি, ওই রোগীকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা ছিল। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের চালক নার্সিংহোমে ভর্তি করায়। ওই রোগীকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেল করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স চালককেও খোঁজা হচ্ছে। এই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আমরা আইনত তবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছি। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের থেকে জবাব চাওয়া হয়েছে।’ সিল করা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেছেন, ‘সারা রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে। যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়িয়ে উঠেছে নার্সিংহোম। জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর এ বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। আমরা রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ করব। ডিএম অফিস অফিস ঘেরাও করব।’
মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র আশিস কুন্ডু বলেছেন, ‘প্রশাসন সজাগ রয়েছে। যে সমস্ত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ গরিব মানুষের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিজেপি সব কিছুতেই বিরোধিতা করে। এ জন্যই বাংলার মানুষ তাদেরকে এই বাংলা থেকে বিসর্জন দিয়েছে।’