এই সময়, আসানসোল ও রামপুরহাট: সরকারি ক্ষতিপূরণ। তা কড়কড়ে নগদে! এমনটা কেউ কখনও শুনেছেন কি না সন্দেহ। সরকারি যে কোনও টাকার লেনদেন সাধারণত চেক, ডিম্যান্ড ড্রাফ্ট, নিদেনপক্ষে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমেও হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, চেক ও ডিম্যান্ড ড্রাফ্টও এখন অতীত। সরকারের প্রায় সমস্ত লেনদেনই এখন ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে হয়।
উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার অবশ্য এ সবের ধার ধারেনি। তাদের প্রতিনিধিরা এ রাজ্যে এসে কুম্ভে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে হাতে হাতে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়ে গেলেন রাজ্যের কয়েকটি পরিবারের হাতে! যাঁরা টাকা পেলেন, তাঁরা আতান্তরে। কারণ কোন খাতে, কোথা থেকে তাঁরা এই টাকা পেলেন, তার সমর্থনে কোনও নথি তাঁদের কাছে নেই।
ব্যাঙ্কে সেই টাকা জমা করতে গেলেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। শুধু যোগীর পুলিশ কোথাও প্রমাণ হিসেবে প্রাপকের সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছে। কোথাও টাকার হাতবদলের ছবি মোবাইলে তুলে নিয়ে গিয়েছে। ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমবস্যার পুণ্যস্নানের সময়ে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই তালিকায় বাংলার বেশ কয়েকজন ছিলেন।
যোগী সরকার ঘোষণা করেছিল মৃতদের পরিবার পিছু ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মনে করা হচ্ছে, তারই একটি অংশ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়ে গেল যোগীর পুলিশ। বাকি টাকা তাঁরা আদৌ পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন অধরা। অভিযোগ, যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, বাংলায় এসে তাঁদের দেহ সৎকার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন আত্মীয়েরা।
সেই কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা–নেত্রী ও প্রশাসন। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ায় কেন্দার বিনোদ রুইদাস কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। তাঁর স্ত্রী শর্মিলার হাতে সরকারি কোনও কাগজপত্র ছাড়াই উত্তরপ্রদেশের তিন পুলিশকর্মী এবং সাদা পোশাকে আসা এক ব্যক্তি নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দিয়ে চলে গিয়েছেন। সাদা কাগজে শর্মিলাকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়, বিনোদের পরিবার টাকাটা পেয়েছে।
শর্মিলা ছাড়াও তাঁর শ্বশুর–শাশুড়িও সেখানে সই করেছেন। সেই টাকা নিয়ে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না শর্মিলারা। কুম্ভে মৃত বীরভূমের রামপুরহাটের ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা গায়ত্রী দে–র ছেলে প্রতাপের হাতে একই ভাবে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে গিয়েছেন তিনজন। তাঁরা নিজেদের প্রয়াগরাজ থানার কনস্টেবল বলে পরিচয় দেন। প্রতাপকেও কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি।
শুধু টাকা দেওয়ার সময়ের একটা ছবি তুলে নিয়ে যান ওই পুলিশকর্মীরা। প্রতাপ বলেন, ‘আমরা প্রয়াগরাজ থানায় গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছি। টাকাটা নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না।’ বিনোদের স্ত্রী শর্মিলা জানিয়েছেন, পাঁচ লক্ষ টাকা জমা করতে গেলে উৎস জানতে চায় ব্যাঙ্ক। কোনও রকমে ওই টাকা একটি অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারলেও দ্রুত শর্মিলাকে টাকার উৎসের নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ব্যাঙ্ক।
শর্মিলা বলেন, ‘১৯ মার্চ আমাদের আগাম কিছু না জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের তিন জন পুলিশকর্মী বাড়িতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে আরও একজন ব্যক্তি ছিলেন।’ তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশ সরকার চেকে এই টাকা দিলে একটা প্রমাণ থাকত। তাঁরা ভেবেছিলেন হয়তো ওঁরা ডেথ সার্টিফিকেট আনবেন। সেটাও আনেননি।
আসানসোলের বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিনোদের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারকে জানিয়ে এসেছিলেন, বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করবেন।
পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ পাওয়ার খবর জেনে জিতেন্দ্র বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকারের পুলিশ নিজেরাই এসে টাকাটা দিয়ে গিয়েছে। বিনোদের বাড়িতে আসার আগে ওঁদের এক আত্মীয়কে ইউপি পুলিশ জানিয়েছে, বাকি টাকাও কিস্তিতে ওঁরা পাবেন। এখন ওঁদের টাকা রাখতে গিয়ে ব্যাঙ্কে যদি কোনও সমস্যা হয়, তা হলে সেটা জেলা প্রশাসনের দেখা উচিত।’