এই সময়, উলুবেড়িয়া: বর্ষার রূপালী ফসল হল ইলিশ। বৃষ্টির জল না পড়লে নদীতে সাধারণত ইলিশের দেখা মেলে না। যদিও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসতে এখনও অনেক দেরি। ফলে ইলিশের মরশুম এখনও শুরুই হয়নি। এই অসময়ে হাওড়ার রূপনারায়ণ ও হুগলি নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ভরা চৈত্রে মৎস্যজীবীদের জালে উঠছে রূপালী ফসল। নদীর টাটকা ইলিশের স্বাদ নিতে হাওড়ার শ্যামপুর, উলুবেড়িয়ার স্থানীয় বাজারগুলিতে ভিড় করছেন অনেকে। সেই ইলিশ কিনে অবশ্য অনেকেই বোকা বনে যাচ্ছেন। কারণ, তাতে ইলিশের কোনও স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাওড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় বাজারগুলিতে গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ আমদানি হচ্ছে। তবে তার ওজন খুব বেশি নয়। এগুলো মূলত খোকা ইলিশ। ওজন গড়ে ২৫০–৪০০ গ্রাম। দাম কিলো প্রতি ৩০০–৪০০ টাকা। দাম নাগালের মধ্যে হওয়ায় অন্য মাছ না কিনে অনেকে ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছেন। ফলে আকারে ছোট হলেও বাজারে ইলিশের চাহিদা ভালোই রয়েছে।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকার সিংহভাগটাই নদী বেষ্টিত। এক দিকে রয়েছে হুগলি নদী। অন্য দিকে রূপনারায়ণ। বর্ষার সময় হুগলি এবং রূপনারায়ণ, দুই নদীতেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। হুগলির নদীরে তীরে অবস্থিত উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বর, নবগ্রামের বাড়কোলিয়া, শ্যামপুরের গাদিয়াড়া প্রভৃতি এলাকায় বহু মানুষ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।
রূপনারায়ণের তীরে অবস্থিত ডিহিমণ্ডলঘাট, কমলপুর, বাগনানের মানকুর দেগ্রাম, বেনাপুর এলাকাতেও বহু মৎস্যজীবী পরিবারের বসবাস। নদীতে জোয়ার এলেই ডিঙি নৌকা নিয়ে তাঁরা বেড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, গরমের সময় নদীতে জল কমে যায়। তাই মাছও বেশি পড়ে না। তাই এই সময়টা তাঁদের কাছে শুখা মরশুম। এই সময় হাতেগোনা কিছু লোক নদীতে মাছ ধরতে যান।
বাকিরা এই সময়টায় অন্য কাজ করেন। কিন্তু হুগলি ও রূপনারায়ণে ইলিশের ঝাঁক ঢুকেছে শুনে অনেকেই নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। একেকটা নৌকায় রোজ গড়ে ১০–১৫ কেজি ইলিশ উঠছে। সেই মাছ ফুলেশ্বর, শ্যামপুর, চেঙ্গাইল, বাউড়িয়া–সহ বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
ফুলেশ্বরের মাছ বিক্রেতা লক্ষীকান্ত পাখিরা বলেন, ‘সাধারণত এই সময় নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। এ বছর নদীতে প্রচুর খোকা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ভালো দামেই বিক্রি হচ্ছে।’ গাদিয়াড়ায় বেড়াতে এসেছিলেন শ্যামনগরের কার্তিক মুদি। ফেরার সময় তিনি দেখেন, গাদিয়াড়া বাসস্ট্যান্ড বাজারের কাছে খোকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। দামটাও কম। টাটকা ইলিশ দেখে সুযোগ হাতছাড়া করলেন না।
কেজি প্রতি ৩০০ টাকা দরে ২০০–২৫০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। দাম কম বলে শুকো মাছের ব্যবসায়ীরাও এই ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। হুগলি ও রূপনারায়ণ নদী থেকে যে ভাবে ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে তাতে চিন্তিত মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকরা। মৎস্য দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘খোকা ইলিশ ধরা বেআইনি। এর ফলে বর্ষার সময় হুগলি ও রূপনারায়ণ নদীতে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে না।’