এই সময়: তাঁকে কলকাতায় ফেরানোর জন্য রাজ্যসভায় গলা ফাটিয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। যা নিয়ে তৈরি হয় প্রবল রাজনৈতিক বিতর্কও। তবে সেই ‘নির্বাসিত’ লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিজেই পাকাপাকি ভাবে কলকাতা ফিরতে চান না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই–কে দেওয়া এক টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে তসলিমা জানিয়েছেন, বর্তমানে দিল্লি থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর বিতাড়িত হতে চাই না।’ তবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর অনুরোধ, মাঝেমধ্যে যদি তাঁকে কলকাতা যাতায়াত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়, তা হলে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য উৎসব, বইমেলার মতো অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেন। তসলিমার কথায়, ‘আমাকে রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠী ফুটবলের মতো লাথি মেরে এ দিক-ও দিক ছুড়ে দিয়েছে, কারণ আমার সাহিত্য ও বিশ্বদর্শন তাদের জন্য অস্বস্তিকর ছিল। আমার জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি আর বিতাড়িত হতে চাই না। বরং, সরকার যদি আমাকে কলকাতায় আসার অনুমতি দেয়, যাতে আমি সাহিত্য উৎসব ও বইমেলায় যোগ দিতে পারি, তবে আমি খুশি হব। আমি এ সব অনুষ্ঠানের নিয়মিত আমন্ত্রণ এখনও পাই।’
এর আগে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন তসলিমা। কিন্তু পরে ‘দ্বিখণ্ডিত’ নামে তাঁর একটি বই কলকাতাতেও নিষিদ্ধ হয়। তসলিমার বিরুদ্ধে কলকাতায় একজন উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভ উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে। সামাল দিতে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন বাম সরকার। এরপরে তসলিমা কলকাতা থেকে রাজস্থানের জয়পুরে চলে যেতে বাধ্য হন। অবশেষে তাঁর আশ্রয় হয় দিল্লিতে। তসলিমার কথায়, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না যে, যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক বলে দাবি করে, সেই বামপন্থীরা আমাকে বের করে দিল। তারা আমার বই নিষিদ্ধ করল! কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, তারা শুধুই সুযোগসন্ধানী।’
তসলিমার অভিযোগ, তাঁকে দিল্লি ছাড়ার ব্যাপারেও চাপ দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন দিল্লি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বিদেশে কোথাও চলে যান। তা হলে অনেক টাকা–পয়সা দেওয়া হবে। সেই প্রস্তাবও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে সংসদে তাঁর বিষয়ে কথা বলার জন্য শমীককে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ওই লেখিকা।