সুদীপ দত্ত
তাঁতের শাড়ি অনেকেই ভালবাসেন। কিন্তু শাড়ি ভালোবাসার পাশাপাশি তাঁত শিল্পকেও সমান ভালোবেসেছেন শিলিগুড়ির রোশনি ভট্টাচার্য। আধুনিক পোষাক-ই যখন 'ট্রেন্ড', তখন রোশনি ভেবেছেন সুতোয় বোনা শিল্পকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়। তাঁতিদের সঙ্গে থেকে চরকা কাটা, সুতো রং করা, তাঁত বোনা- এ সব নিজের চোখে দেখে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। সময় কাটিয়েছেন তাঁত- শিল্পীদের সঙ্গেও।
তাঁর তাঁতিরা তৈরি করেন জামদানি শাড়ি, চুড়িদার, শার্ট, স্টোল, ফ্যাব্রিক। কোভিডের সময়ে যখন সারা পৃথিবী জুড়ে শুধুই হতাশা এবং বাজার মন্দা হওয়ার কারণে তাঁত শিল্প রীতিমতো ধুঁকছে, তখন অনলাইনে ক্রেতা জোগাড় করে তাঁতিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। রোশনি বলছেন, 'জামদানি শাড়ির শৈল্পিক কারুকার্য খুব উৎকৃষ্ট। হাতে বোনা হয় বলে খুব নরম এবং হালকা হয় এই শাড়ি। আমাদের রাজ্যের বাইরেও এর প্রচুর চাহিদা আছে। কিন্তু পাওয়ারলুমের দাপটে তাঁতশিল্প ক্রমশ পিছু হটছে। তবে, মায়ের হাতের রান্নার যেমন বিকল্প নেই, তেমনই হাতে বোনা শাড়িরও কোনও বিকল্প নেই।' তাঁর সংযোজন, 'বাংলার তাঁত শিল্প খুবই প্রাচীন এবং একটা ঐতিহ্যও বটে। সেই ঐতিহ্য এবং তার ধারক ও বাহকদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদেরই কর্তব্য। সেই তাগিদ থেকেই তাঁতিদের নিয়ে কাজ করি।'
২০২৪- এ ভারত সরকারের এমএসএমই দপ্তর থেকে মেলবোর্ন গ্লোবাল এক্সপো-তে মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পান রোশনি। সেখানে যাঁরা বাংলার শিল্প নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, বাংলার কাজ ও তার পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল তিন দিনের এই প্রদর্শনী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা প্রদর্শনীতে এসেছিলেন তাঁদের শিল্প সম্ভার নিয়ে। তাঁদের সঙ্গে ভাবনার আদানপ্রদান হয় তাঁর। রোশনির কথায়, 'উত্তরবঙ্গের মুগা সিল্ক বিখ্যাত। কোচবিহারের মেখলার একসময়ে প্রচুর খ্যাতি ছিল। তুফানগঞ্জ মহকুমায় 'এরি সিল্ক'-এর কাজ হয়। এখন সেখানে গিয়ে তাঁতিদের সঙ্গে বসে নতুন কাজ করছি। নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে, তাঁদের ব্যবহারের উপযোগী নতুন ধরনের পোশাক তৈরির চেষ্টা করছি।'
রোশনির কাজ বেশ সমাদৃত হয়েছে। বিভিন্ন শাড়িতে আধুনিক 'মোটিফ' যেমন- চেরি, প্রদীপ, পেঁচা ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন তিনি। আশার কথা, নতুন প্রজন্ম শাড়িতে আগ্রহী হচ্ছে। শুধু সরস্বতী পুজো, মহাষ্টমী বা বিয়ের অনুষ্ঠানই নয়, প্রতিদিনের পোশাক হিসেবেও তাঁতের শাড়ি 'ভাইরাল' হবে- এমনটাই স্বপ্ন দেখেন তাঁত তনয়া রোশনি।