• ‘অন্তর্ধান রহস্য’-এর নেপথ্যে মা? বাড়ছে ধোঁয়াশা
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী ■ আলিপুরদুয়ার

    নাবালক যুগলের 'অন্তর্ধান' রহস্যে নয়া মোড়। কিশোরীর মায়ের ভূমিকায় প্রবল সন্দেহ তদন্তকারীদের। কিশোরী তার প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছাড়ার পরেও মা–মেয়ের যোগাযোগ ছিল, এমনটাই তথ্য মিলেছে মোবাইলের কল ডিটেলসে। অথচ কিশোরীর অভিভাবকরা যুগলের ছবি–সহ অন্যান্য তথ্য নিজেরাই তুলে দেন পুলিশের হাতে! এই সূত্রের ভিত্তিতেই ট্রেনে তল্লাশি চালিয়ে দু'জনকে পাকড়াও করেছে আরপিএফ।

    আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা মেয়েটির বয়স ১৬। তার প্রেমিকের ১৭ বছর বয়স, বাড়ি বিহারে। মাত্র ছ'মাস তাদের পরিচয়। তা সত্ত্বেও নাবালক প্রেমিককে নিজেদের বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলেন কিশোরীর অভিভাবকরা। এখানেই শেষ নয়। সেই কিশোরের জিম্মায় নাবালিকা মেয়ে ও ছেলেকে রেখে চিকিৎসার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন মা–বাবা! তাই গোড়া থেকেই মা–বাবার ভূমিকা ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। তদন্ত এগোতে এই সন্দেহই জোরালো হচ্ছে, পুরো ঘটনাই সাজানো নয় তো!

    মঙ্গলবার গভীর রাতে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন কিশোরীর অভিভাবকরা। অভিযোগ, বিহার থেকে প্রেমিক দলবল নিয়ে এসে বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে। মেয়েকে মারধর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে। মেরেছে নাবালক ছেলেটিকেও। পুলিশ তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সব তথ্য দেয় আরপিএফকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটনা থেকে নয়াদিল্লিগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে তল্লাশি চালিয়ে কিশোরী ও তার প্রেমিককে পাকড়াও করা হয়। পাটনা আদালতে পেশ করে তাদের ট্রানজি়ট রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুক্রবার ভোররাতে জেলা পুলিশ যুগলকে সড়কপথে নিয়ে আসে আলিপুরদুয়ারে।

    যুগলকে উদ্ধার করার আগেই পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, কিশোরীর মায়ের প্ররোচনাতেই অন্তর্ধানের ঘটনা সাজানো হয়েছে। তিনি পেশায় প্রাথমিক শিক্ষিকা। তার কল রেকর্ড খুঁটিয়ে পরীক্ষার পরে পুলিশ জানতে পারে, কিশোরী পাটনা স্টেশন থেকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে সওয়ার হয়ে তার মাকে দিল্লি যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। বাড়ির আসবাবপত্র, ফ্রিজ, টিভি, ল্যাপটপ ও সোনার গয়না হাপিস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন নাবালিকার অভিভাবকরা। এ ক্ষেত্রে এক মহিলা–সহ ন'জনের যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছিল কিশোরীর পরিবার। তবে এই 'গল্প' বিশ্বাস করতে নারাজ পুলিশ কর্তারা। তাই পুরো ঘটনায় কিশোরীর মা–কে স্ক্যানারে রাখা হয়েছে। ঘরের সব সামগ্রী কোথায় উধাও হয়ে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই যুগল বাড়ি থেকে পালিয়ে ঠিক কোন পথে পাটনা পৌঁছে গেল, সেটা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

    বিহার থেকে নাবালক প্রেমিক আলিপুরদুয়ারে কিশোরীর বাড়িতে আসত— এমনই দাবি করেছিলেন নাবালিকার অভিভাবকরা। কিন্তু তদন্তে অন্য কাহিনি উঠে আসছে। পুলিশের দাবি, মাঝেমধ্যে নয়, টানা তিনমাস প্রেমিক বহাল তবিয়তে কিশোরীর বাড়িতে কাটিয়েছে। কিশোরীর বাবা ও মায়ের প্রশ্রয় ছাড়া স্বল্প দিনের পরিচিত এক কিশোর কি বাড়িতে বসবাস করতে পারে? এমনকী ওই যুগলের মেলামেশার ক্ষেত্রেও কোনও সীমারেখা টানেননি অভিভাবকরা।

    পুলিশের হাতে ধরা পড়া যুগলকে টানা জেরা করে রহস্যের কিনারা করার প্রস্তুতি সেরে রেখেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, 'রেল পুলিশের সহায়তায় ও আমাদের তৎপরতায় ওই যুগলকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়েছে। জেরা পর্বের পরে সব রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হবে।'

  • Link to this news (এই সময়)