বাসুদেব ভট্টাচার্য ■ ময়নাগুড়ি
এক প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল বাগজান আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই স্কুলের 'আনন্দ পরিসরে' স্মার্ট হচ্ছে ক্ষুদে পড়ুয়ারা। স্কুলে স্মার্ট টিভি স্ক্রিনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় পড়ছে ওরা। আধুনিক গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওদের এ ভাবেই স্মার্ট করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষিকারা। ময়নাগুড়ি ব্লকের এক প্রান্তিক গ্রাম বাগজান। তারও একেবারে ভিতর দিকে রয়েছে স্কুলটি। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত সেখানে ব্ল্যাক বোর্ড, চক পেন্সিল ও ডাস্টার দিয়ে চলত পঠনপাঠন। এখন ক্লাসরুমে এসেছে নতুন একটি স্মার্ট টিভি। শুরু হয়েছে স্মার্ট ক্লাস। ময়নাগুড়ির এক বাসিন্দা মনোজ সাহা ওই টিভি স্কুলকে উপহার দেন। সপ্তাহে পাঁচদিন পালা করে প্রতিটি ক্লাসে স্মার্ট টিভি স্ক্রিনে পড়ানো হচ্ছে স্কুলের খুদেদের। আর শনিবার সমস্ত ক্লাস একত্র হয় সেই আনন্দ পরিসরে।
এই পরিসর হলো, বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত একটি আলোচনা ক্ষেত্র, যেখানে সমস্ত ক্লাসের খুদেরা সাধারন জ্ঞান বা মহাকাশ বিষয়ক বিভিন্ন অডিও ভিজ়ুয়াল প্রোগ্রাম দেখে। নিয়মিত ক্লাসে তারা বিভিন্ন ভিডিয়ো দেখে বাংলা–ইংরেজি বর্ণমালা শেখে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, 'প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে–মেয়েরাও যাতে আধুনিক শিক্ষায় বড় হতে পারে, সেই ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন মনোজবাবু। তাঁর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।' আগামীতে স্কুল ছুটির পরে ছোটদের বিভিন্ন সিনেমা দেখানোর কথা চলছে বলে জানালেন তিনি।
স্যর-ম্যামেরা যখন বিভিন্ন ফুল বা ফলের নাম শেখায় তৎক্ষণাৎ স্ক্রিনে ফুটে ওঠে সেই সমস্ত ছবি। সেই সঙ্গে অন্য পাঠ্য বিষয়গুলিও তাদের পড়ানো হয় স্মার্ট টিভির মাধ্যমে। এবং শনিবারের সেই বিশেষ দিনে স্কুল ছুটির পরে খানিকটা বাড়তি সময় শিক্ষকরা কাটান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। তাদের পাঠ দেন মহাজাগতিক বিষয়ে, যেমন গ্রহ–নক্ষত্রের অবস্থান, আবার কোনও দিন টিভি চ্যানেলে হওয়া বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যচিত্র বা ওয়াইল্ড লাইফ শো–ও দেখানো হয় তাদের। সেই সঙ্গে জ্ঞান বাড়তে থাকে ইতিহাস, ভূগোল ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে।
বাগজান প্রাথমিকের পড়ুয়া সংখ্যা ৮৪। প্রত্যেকেই প্রায় স্থানীয় বাসিন্দা। স্কুলের প্রতি তাদের আগ্রহ জিইয়ে রাখতে স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সারা বছরের কর্মকাণ্ড ফ্রেমবন্দি করে তাও টিভিতে দেখানো হয়, যাতে তারা সাম্প্রতিক বিষয় বা নতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে পারে। পেন ড্রাইভে এই বিষয়গুলি স্টোর করে নিয়ে এসে সেগুলি টিভিতে চালিয়ে দেখানো হয় বলে জানালেন স্কুলের শিক্ষিকা জয়িতা সাহা। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া রায় বলে, 'এই রকম টিভি তো আমি আগে দেখিনি। স্যর, ম্যাডামরা আমাদের এখন টিভিতেই পড়ান। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অনিমেষ রায়ের কথায়, 'টিভিতেও যে পড়াশোনা করা যায়, তাই তো জানতাম না। ভালো লাগে নতুন ভাবে পড়াশোনা করতে।'
একদিকে, যেমন পড়ার আগ্রহ বাড়ছে তেমনই কমছে স্কুল ছুটের সংখ্যাও। পাশাপাশি স্কুলের পড়ুয়ারা স্মার্ট টিভিতে ক্লাস করতে বেশ আগ্রহী। পাঠ্যের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে তারা জানতে পারছে। তাদের নিজেদের অনুষ্ঠানও টিভিতে দেখতে পাচ্ছে, যা তাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।