• জলসঙ্কট-ধস-ঘরে ফাটল, হাওড়ার বেলগাছিয়া যেন বিপদের আঁতুরঘর
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৫
  • পানীয় জলের পাইপ ফেটে বৃহস্পতিবার থেকে ভোগান্তি শুরু হয়েছে হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকায়। শনিবারও উত্তর হাওড়ায় সেই ভোগান্তি অব্যাহত। উত্তর হাওড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলসঙ্কট এখনও তীব্র। এলাকার লোকজনই বলছে, কোথাও কোথাও দিনে কিছু ক্ষণের জন্য জল মিললেও, সমস্যার সমাধান হয়নি।

    পর পর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ধস নেমেছে। জল নেই, খাবার নেই, মাথার ছাদটুকু নিয়েও অনিশ্চয়তা চলছে। ধসের জেরে এলাকার একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফে মাইকিং হচ্ছে সকাল থেকে। বলা হচ্ছে, যাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছে, তাঁরা যেন নিরাপদ জায়গায় চলে যান। কারণ যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। দরকারি কাগজ পত্র এবং জমির দলিল, নথি নিয়ে বেরিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। জলের গাড়ি দিয়ে সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা করছে হাওড়া পুরসভা। অন্য দিকে আবার দোসর ধসের আতঙ্ক। জোড়া ফলায় বিদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা।

    এ দিন বিজ্ঞান মঞ্চের লোকজন এলাকা পরিদর্শন করেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ১০ সদস্যের একটি দল যান ঘটনাস্থলে। এই বিপর্যয় প্রসঙ্গে মঞ্চের হাওড়া জেলার সহ সম্পাদক শঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হচ্ছে, দীর্ঘ দিন ধরে আবর্জনা এ ভাবে জমতে থাকায় মিথেন বা অন্যান্য বিপজ্জনক গ্যাস তৈরি হয়ে মাটির তলায় চাপ বাড়ে। সেই কারণে বাড়ঘরে ফাটল ধরছে।

    একই সঙ্গে তাঁরা এও মনে করছেন, ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অত্যাধিক আবর্জনার চাপে মাটিতে যে চাপ সৃষ্টি হয় বা অত্যাধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার ফলে মাটির তলা আলগা হয়ে যাওয়ার কারণেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।

    বৃহস্পতিবার বেলগাছিয়া ভাগাড় এলাকায় ধসের কারণে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের পাইপ লাইন ফেটে যায়। ফলে উত্তর হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে শিবপুরে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়। পুরসভা ও কেএমডিএ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজও শুরু করে। কিন্তু শুক্রবার সকালে ফের নতুন করে ধস নামে এলাকায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় মেরামতির কাজ। অন্য দিকে ভূমিধসের কারণে ওই এলাকার হরিজন বস্তিতে একাধিক বাড়ি, দোকান, রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়।

    শনিবার সকালে সেখানে যান মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি জানান, একটা বিপর্যয় ঘটেছে। সে কারণে পুরসভার জল সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। শিবপুর এবং মধ্য হাওড়া এলাকায় জল সরবরাহ শুরু হলেও উত্তর হাওড়ায় এখনও তা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন পুরসভা থেকে জলের গাড়ি এনে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যায় আগামী দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

    পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, বেলগাছিয়া মোড়ে নতুন পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলে উত্তর হাওড়ার বাসিন্দারা পানীয় জল পাবেন। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানান, ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী শিবিরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পুরসভার একটি স্কুলের পাশাপাশি ক্লাবেও থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী ঘর সেরে অস্থায়ী আস্তানায় কে-ই বা যেতে চায়? উদ্বেগ-চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে।

  • Link to this news (এই সময়)