দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
'হালকা ড্রিঙ্ক অবশ্যই করেছি। হোলি আজকে। একটা দুটো বিয়ার তো অবশ্যই খাব আমরা...।' সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও ভাইরাল এই বক্তব্য (সত্যতা যাচাই করেনি এই সময়)। ঘটনাটি নদিয়া জেলার। দোলের দিন মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোর অভিযোগে দুই যুবককে আটক করেছিল নদিয়ার শান্তিপুর ট্র্যাফিক। পুলিশি জেরায় নেশা করে বাইক চালানোর কথা কবুল করেন ওই দুই যুবক। উপরের বক্তব্যটি তাঁদেরই একজনের।
ওই যুবকের সঙ্গী আবার বলেছেন, 'লিমিটে আছি'। সুরাপ্রেমীরা নিজেদের যতই 'লিমিটে' রাখার দাবি করুন না কেন তথ্য বলছে এ বার দোলে 'লিমিটলেস' মদ বিক্রি হয়েছে। দোলে মদ বিক্রি করে রাজ্যের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। শুধুমাত্র বিয়ার থেকে এসেছে ৭০ কোটি টাকা। পিছিয়ে নেই পূর্ব মেদিনীপুরও। দেড় দিনে জেলায় মদ বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি।
মদ বিক্রিতে প্রতি বছর নতুন রেকর্ড গড়ছে পূর্ব মেদিনীপুর। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, বর্ষবরণ, জামাইষষ্ঠীর মতো উৎসব অনুষ্ঠানে মদ বিক্রির রেকর্ড তো ছিলই। এ বার দোলেও মদ বিক্রিতে নজির তৈরি হলো পূর্ব মেদিনীপুরে। জানা গিয়েছে, দোলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মদ বিক্রি বিগত সমস্ত বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মদ বিক্রির বাড়বাড়ন্ত দেখে তাজ্জব খোদ আবগারি দপ্তরের কর্তারাও।
আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকানের সংখ্যা ২৮৮। ১৪ মার্চ ছিল দোল। ওই দিন বেলা ২ টোর পরে খোলা হয়েছিল মদের দোকান। দোল উপলক্ষে মদ কেনার জন্য ১৩ মার্চ থেকে মদের দোকানগুলিতে কার্যত লাইন পড়ে যায়। দেড় দিনে জেলায় রেকর্ড মদের বিক্রি হয়।
আবগারি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার দোলে দিশি মদ বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৭৩০ লিটার। বিলিতি মদ বিক্রি হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৭০ লিটার। বিয়ার বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৫ লিটার। সব মিলিয়ে দোল উপলক্ষে মাত্র দেড় দিনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬১ হাজার ২২৩ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে।
আবগারি দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, 'দোলে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। গত বার দোলের থেকে এ বার অনেক বেশি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে।'
মদের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তা সত্ত্বেও ভাটা নেই বিক্রিতে। মদ বেচে লক্ষ্মীলাভ করছে সরকার। এ দিকে, চোলাই বিরোধী অভিযানও জারি রয়েছে। দোলের দিন অভিযান চালিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ১৩২ লিটার চোলাই উদ্ধার করে আবগারি দপ্তর। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু'জনকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দু'টি বাইক। শিক্ষায় আগুয়ান জেলায় মদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আতঙ্কিত নাগরিক সমাজ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মদ ও মাদক দ্রব্য বিরোধী কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, 'রাজ্য সরকার ঢালাও মদের লাইসেন্স দেওয়ার কারণে সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। অবিলম্বে রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।'