সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
তিন দিনের প্রি নন ইন্টারলকিং এবং নন ইন্টারলকিং কাজের পরে অবশেষে জুড়ে গেল পুরুলিয়া–কোটশিলা ডবল লাইন। ৩৭ কিমি ডবল লাইনে এ বার ট্রেন চলাচল শুরু সময়ের অপেক্ষা। এর সঙ্গে পুরুলিয়া স্টেশনে তৈরি হচ্ছে নতুন দু’টি প্ল্যাটফর্ম। ৬১৫ মিটার দীর্ঘ ওই দু’টি প্ল্যাটফর্মে স্টপ দিতে পারবে এক্সপ্রেস ট্রেন। পুরুলিয়া–কোটশিলা ডবল লাইন জুড়ে যাওয়ায় টাটা, বোকারো, ধানবাদের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ অনেক মসৃণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই রেলপথ ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের সঙ্গে বোকারো–ধানবাদ শিল্পাঞ্চলের সংযোগ কম সময়ে করতে পারে। তেমনই হাওড়ার সঙ্গে রাঁচির যোগাযোগও রেলের এই শাখার মাধ্যমে সব থেকে কম সময়ে হওয়া সম্ভব। একই ভাবে রাঁচির সঙ্গে পুরুলিয়া হয়ে আসানসোল, দুর্গাপুর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের সব থেকে সংক্ষিপ্ত পথ হতে পারে এটি। বর্তমানে রাঁচি-পুরুলিয়া- হাওড়া বন্দে ভারত সমেত রাঁচি-পুরুলিয়া-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নিয়মিত ভাবে এই রুটে চলাচল করে। চলে অগুনতি পণ্যবাহী গাড়ি।
ডবল লাইনের অনুমোদনের পর ২০২১ সালে শুরু হয় নির্মাণকাজ। তার পরে ঢিমে তালে চলতে থাকে কাজ। গত বছর থেকে কাজে গতি আসে। অবশেষে শনিবার নতুন ডবল লাইন পুরুলিয়া স্টেশনের ইয়ার্ডের কাছে সংযুক্ত করা হয়। এ দিন পুরুলিয়া স্টেশনে নন ইন্টারলকিং ছিল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু লাইন সংযুক্তিই হয়নি, ডবল লাইনে ট্রেন নিয়ে যাওয়ার জন্য সিগন্যালিংয়ের যাবতীয় কাজও করা হয়েছে। জুড়ে দেওয়া হয়েছে ওভারহেড তার।
এই রুটের স্মৃতিচারণে পুরুলিয়ার বাসিন্দা, দক্ষিণ–পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার অচিন্ত্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরুলিয়া–কোটশিলা প্রথমে ন্যারোগেজ ছিল। ১৯০৭ সালে পুরুলিয়া থেকে রাঁচি ন্যারোগেজ রেলপথ স্থাপিত হয়। পরে বোকারো-কোটশিলা থেকে রাঁচি ব্রডগেজ হয়ে গেলেও এই রেলপথটুকু ন্যারোগেজই রয়ে যায়। ১৯৯২ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের পর এটি ব্রডগেজে পরিণত হয়। তখন থেকেই গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে এই লাইনের।
তবে চাহিদা থাকলেও সিঙ্গল লাইনের কারণে এই রুটে ট্রেন বাড়ানো সম্ভব ছিল না। এ বার সেই সব সমস্যা মিটে যাবে। দক্ষিণ–পূর্ব রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনের সহ সম্পাদক দেবু চক্রবর্তী বলেন, ‘রেলের পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আশা রাখব আদ্রা ডিভিশন গুডস ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেন বাড়ানোর দিকেও নজর দেবে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলি এখনও মারাত্মক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে রেল পরিষেবার দিক থেকে।’
কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির পর্যবেক্ষণের পরে নতুন ডবল লাইন বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়ে যাবে জানিয়ে আদ্রার ডিআরএম সুমিত নারুলা বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকেই সিআর ইনস্পেকশন করানোর চেষ্টা চলছে। পুরুলিয়ায় নতুন প্ল্যাটফর্ম সমেত ইয়ার্ডের কাজও আট, নয় মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এতে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচলেরও উন্নতি হবে।’