• উত্তরের আকাশে মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ীরা, প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রে
    এই সময় | ২৩ মার্চ ২০২৫
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি

    ফি বছর শীত পড়তেই দল বেঁধে উড়ে আসত ওরা। অস্থায়ী বাসা বাঁধত জঙ্গল লাগোয়া জলাশয় এবং বড় নদীগুলিতে। ডুয়ার্সের জলঢাকা, তিস্তা, মূর্তি নদীর জঙ্গল সংলগ্ন বড় বড় গাছ, ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনীর বিরাট জলাশয় ছিল ওদের আস্তানা। কিন্তু অনেকেই এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ডুয়ার্স থেকে। প্রতি শীতেই পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তারা না–আসায়, প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রে।

    আগে লাদাখ থেকে আসত ব্রাহ্মণী হাঁস, ইউরোপ থেকে ঝুঁটি হাঁস। এদের সংখ্যা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। হিমালয় থেকে হাড়গিলা বা গ্রেটার অ্যাডজুট্যান্ট স্টর্কের ডুয়ার্সে দেখা মেলেনি গত এক–দেড় দশক। সুদূর সাইবেরিয়ার ইউরেশিয়ান মার্শ হ্যারিয়ার প্রজাতির ইগলও আর এ মুখো হয় না। একই ভাবে সাইবেরিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা মাছমুরাল বা অস্প্রে পাখিরও ইদানীং খোঁজ পাওয়া যায় না এই অঞ্চলে।

    নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই সমস্ত পাখিদের অস্থায়ী ঠিকানা ছিল ডুয়ার্সের বনাঞ্চল ও জলাশয়। তবে পাখিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বারবার উঠে আসছে অবাধে গাছ কেটে ফেলা। এ ছাড়া নদী, জলাশয়গুলির মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, সেগুলি মাটি ফেলে ভরাট করে ফেলা তো রয়েছেই। আগের বছর যে উঁচু গাছটায় ওরা আশ্রয় নিয়েছিল পরের বছর সেখানে এসে পরিযায়ীরা আর খুঁজে পাচ্ছে না তাদের পুরোনো আস্তানা।

    এমনটাই জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক তথা পরিবেশবিদ রাজা রাউত। তিনি বলেন, ‘পাখিরা মূলত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পোকামাকড়, ছোট শামুক খায়। তাতে খাদ্যশৃঙ্খলও বজায় থাকে। কিন্তু তারা না আসায় এগুলি বেড়ে চলেছে। প্রধানত ক্যাটফিস জাতীয় মাছ যেমন বোয়াল, শোল, টাকির সংখ্যা বাড়ছে। আবার এই মাছগুলো ছোট মাছ খেয়ে ফেলে। ফলে ছোট মাছের আকাল দেখা দিচ্ছে জলাশয়জুড়ে।’

    তাঁর কথায়, ‘পরিবেশের স্বাভাবিক ধারা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নদী সংলগ্ন চা-বাগানের রাসায়নিক সার নদীর জলে মিশছে। ফলে মাছ–সহ অন্য জলজ উদ্ভিদ বংশবৃদ্ধি করতে পারছে না।’ এই সমস্যার সমাধান হিসেবে তাঁর নিদান, ‘সরকারের তরফে মানুষকে সচেতনতা করাটা সবচেয়ে জরুরি। গ্রামগঞ্জে পঞ্চায়েতের তরফে এই ধরনের কর্মসূচি নিলে গ্রামবাসীরাও পরিবেশ রক্ষা বিষয়ে সচেতন হবে। সে ক্ষেত্রে পরিবেশপ্রেমী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।’

  • Link to this news (এই সময়)