• ক্ষতিপূরণ দেয়নি মৃত ছেলের অফিস, চিঠির পর চিঠি বাবার
    এই সময় | ২৩ মার্চ ২০২৫
  • চিঠির পর চিঠি লিখেই চলেছেন তিনি। এক মাস–দু’মাস, এক বছর–দু’বছর নয়। গত ১৫ বছর ধরে। চিঠি যাচ্ছে কখনও রাষ্ট্রপতি ভবনে, কখনও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আবার কখনও নবান্নে। কিংবা বিধানসভায় বিধায়কদের টেবিলে। সেই সব চিঠির কোনও জবাব তিনি পান না। তবু ছেলে সৌরভ বারিকের মৃত্যুর পর ছেলের কর্মস্থল থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেই চলেছেন উত্তর শহরতলির ইছাপুরের প্রৌঢ় শৈলেন বারিক। কর্মরত অবস্থায় ওই সংস্থার অফিসে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছিল শৈলেনের একমাত্র সন্তান সৌরভ বারিকের! আগুন লাগার সেই ঘটনার ১৫ বছর বা দেড় দশক পূর্ণ হবে আজ, ২৩ মার্চ। স্টিফেন কোর্টের আগুন। পার্ক স্ট্রিটের ওই বহুতলে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ দুপুরে লাগা আগুনে ঝলসে–পুড়ে, বাঁচার জন্য অনেক উঁচু থেকে লাফ দিয়ে পড়ে এবং দমবন্ধ হয়ে মারা যান মোট ৪৩ জন।

    স্টিফেন কোর্টে একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে কাজ করতেন কবিতা বারিক ও শৈলেন বারিকের ছেলে সৌরভ। সেই অফিস ছিল বহুতলটির আটতলায়। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই চাকরি পেয়ে তিনি পরিবারের আর্থিক হাল ধরেন। তার দু’বছর পেরোতে না–পেরোতেই সব শেষ। সৌরভ তখন ২২ বছরের তরতাজা যুবক। তার পর পেরিয়ে গেল দেড় দশক। কিন্তু সৌরভের কর্মস্থল বেসরকারি সংস্থাটি তাদের ওই মৃত কর্মীর বাড়ির লোকজনকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেননি বলে ৬৫ বছরের শৈলেন বারিক জানাচ্ছেন। শনিবার ওই প্রৌঢ় বলেন, ‘ঘটনার পর ছেলের অফিস থেকে কয়েক বছর ধরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তার পর ওই কোম্পানি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে না। এমনকী আমাদের এ–ও বলা হয়েছে, ‘যা করার, করে নিতে পারেন।’ সুবিচার চেয়ে শৈলেন তাই মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি, সবাইকে একের পর এক চিঠি লিখেই চলেছেন।

    ওই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের কিছু কাল পর রাজ্যের তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন সৌরভ বারিকের মা ও বাবা। দগদগে শোকের ক্ষতে মলম যদি আদৌ কিছু হয়, তবে তা ওই টুকুই।

    স্টিফেন কোর্ট বিল্ডিংয়ে সৌরভ বারিকের কর্মস্থলের মতো আরও অনেক অফিস ছিল। সেখানে কর্মরতদের অনেকেই মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের একটা বড় অংশের বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও কমবেশি এ রকমই ঘটনা ঘটে চলেছে। শৈলেন বারিকের মতো স্বজনহারারা প্রথম কয়েক বছর প্রত্যেক ২৩ মার্চ স্টিফেন কোর্টের সামনে হাজির হতেন, প্রতিবাদও জানাতেন। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, সেই প্রতিবাদের রংও যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে বলে সন্তান উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের বাসিন্দা শৈলেন।

    পরে এক শিশুকে দত্তক নেন কবিতা ও শৈলেন। সেই সময়ে সে ছিল তিন বছর তিন মাসের। এ বছর সে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। যে স্কুলে সৌরভ পড়তেন, সেই স্কুল থেকেই। ওই সন্তানকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন শৈলেন ও কবিতা। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, স্বপ্নপূরণ হবে তো? রোজগার নেই, বয়স হয়েছে, ছেলেকে এর পর আর পড়াশোনা কী ভাবে করাবেন?

    শৈলেনের কথায়, ‘আমার ছেলের ইএসআই ছিল। আমি ২০১৩ সালে মামলা করেছিলাম পেনশনের জন্য। সেই মামলাও চলছে। এত চিঠি লিখছি। কেউ কি উত্তর দেবেন না? আমাদের মতো আরও কয়েক জন এই সমস্যায় ভুগছেন। আমাদের কি বিচার পাওয়ার অধিকার নেই?’

  • Link to this news (এই সময়)