• জল নেই! ধান চাষ হয় নেওড়ার বুকে
    এই সময় | ২৩ মার্চ ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস ■ ময়নাগুড়ি

    নদীর নামেই পরিচিতি। কিন্তু আদতে হয়ে উঠেছে ধানখেত। ময়নাগুড়ি ব্লকের বৌলবাড়িতে নেওড়া নদীর মধ্যেই চলছে চাষাবাদ। এর ফলে নদীর গতি হয়ে পড়েছে রুদ্ধ। নদী বাঁচানোর কোনও উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না।

    নদীর জল জেগে রয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবে, তার মধ্যেই মাথা তুলেছে সবুজ ধানের চারা। বৌলবাড়ি গ্রামের পালপাড়ার কাছে পৌঁছে গেলে এ দৃশ্য দেখা যাবে। নেওড়া নদীর মাঝেই বড় জায়গা জুড়ে চলছে ধানের চাষ। এই এলাকা দোমহনী–২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে। ময়নাগুড়ি ব্লকের একাধিক নদীর বুকে চলছে চাষবাস— কলখাওয়া, দ্বারিকামারি, ঝাঝাঙ্গি নদী, ধরলা, শালমারা, ইচিলামারি ঢেকে যাচ্ছে ধানে।

    কেন এ ভাবে ধান চাষ করছেন কৃষকরা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনাকয়েক কৃষিজীবী জানিয়েছেন, ধানচাষে প্রচুর জল লাগে। জলের অভাবের জন্য তাঁরা নদীকে বেছে নিয়েছেন। নদীর অনেক জায়গায় জল কমে চড়া পড়ে গিয়েছে। সেখানকার মাটি উর্বর, জলের জোগান লাগে না আলাদা ভাবে। জমিতে চাষ করলে জলসেচ করতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় চাষিদের। প্রান্তিক কৃষকরা তাই চাষের খরচ কমাতে নদীকে বেছে নিয়েছেন।

    কৃষিকাজের ফলে নানা ধরনের কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এর ফলে নদীর জলও বিষিয়ে যাচ্ছে। অতীতে ময়নাগুড়ি–সহ আশপাশের এলাকায় বিষক্রিয়ায় মাছ মারা পড়েছিল। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্যবিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, ‘ছোট ছোট নদীগুলিতে প্রচুর নদীয়ালি মাছের সন্ধান মেলে। সেগুলি হারিয়ে যাচ্ছে। জলজ উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ মারা যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে বাস্তুতন্ত্রের।’ ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, ‘নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে এ ভাবে চাষ করা উচিত নয় সেটা যতই আর্থিক ভাবে সুবিধাজনক হোক। শীতের শেষে এই সময়ে নদীর জলস্তর ক্রমশ নীচে নেমে যায়। তার উপরে নদীর গতিপথ আটকে যাওয়ার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।’ ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদ রঞ্জন রায় বলেন, ‘এমনটা হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)