সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের জৈনমন্দির ঘেরা প্রত্নস্থল পাকবিড়রা। রয়েছে তিনটি দেউল। কোনওটিই পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রবেশপথে কোনও খিলান নেই। দেউলের ভিতরে পাথরে খোদিত লিপির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি। এই দেউলে দেখা যাবে আদিনাথ, পার্শ্বনাথ, শীতলনাথ, মহাবীর, অজিতনাথ, চন্দ্রপ্রভ, অম্বিকার পাথরের মূর্তি। শিশু কোলে যুগলে দাঁড়িয়ে, এমন মূর্তিও রয়েছে। এর মধ্যে শীতলনাথের মূর্তির উচ্চতা সাত ফুট। পর্যটকদের কাছে এই প্রত্নস্থল এখন নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
এমন পর্যটকদের কথা মনে রেখে নবান্ন এ বার হেরিটেজ ট্যুরিজমে উৎসাহ দিতে প্রত্নস্থলগুলির সংস্কারে উদ্যোগী হলো। প্রথম দফায় পুরুলিয়ার বেগুনকোদোর, পাকবিড়রা, দেউলঘাটে জৈনমন্দির ও মালদার ঐতিহাসিক সৌধ সুলতানি হামাম সংস্কারের কাজ শুরু হচ্ছে। রাজ্যের পুরাতত্ত্ব অধিকর্তার পরমার্শ মেনে এই প্রত্নস্থলগুলির সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে। শুধু পুরুলিয়া জেলার তিন সৌধের জন্যে খরচ করা হবে সাড়ে ছ’কোটি টাকা। মালদার সুলতানি হামাম বা স্নানাগার সংস্কারে খরচ ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা।
ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কাছে পুরুলিয়ার ঝালদার বেগুনকোদোর। নদীর তীরে অযোধ্যা পাহাড়–বেষ্টিত এলাকাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। রয়েছে ঐতিহাসিক ঠাকুরবাড়ি ও রাসমঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই প্রত্নস্থলটি সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে। এপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বহন করছে আড়ষার দেউলঘাটের জৈনমন্দির। এখানে মন্দিরের প্রবেশদ্বারের মাথার দিকটা ত্রিভুজাকৃতি। এখন মাত্র দু’টি ইটের মন্দির দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০০২ সালে একানকার সবচেয়ে বড় দেউলটি ভেঙে পড়ে। এই মন্দিরগুলিতে পাথরের মূর্তিগুলি চোখ টানে।
এমন প্রতিটি দেউল, সৌধ ঘিরেই পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ছে। নবান্নর এক আধিকারিকের কথায়, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যের ধর্মীয় স্থানগুলির পাশাপাশি লোকশিল্প ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে থাকা এলাকাগুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। বহু বেসরকারি সংস্থা লোকশিল্প কেন্দ্রিক এলাকাগুলিতে নিজেদের উদ্যোগে পর্যটকদের উপযোগী পরিকাঠামো তৈরি করেছে। কিন্তু প্রত্নস্থলে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ কম। রাজ্যকেই এগিয়ে আসতে হবে।’ রাজ্যের পুরাতত্ত্বিক আধিকারিক অম্লানজ্যোতি সাহা জানান, পুরাতত্ত্ব অধিকর্তার পরামর্শ মেনে পূর্ত দপ্তর সংস্কারের কাজ করবে। তবে দ্রুত এই কাজ করা সম্ভব নয়। কিছুটা সময় লাগবে।