চাঁদকুমার বড়াল ■ কোচবিহার
রায়ডাক নদীতে জালধোয়া সেতুর প্রকল্প বিশ বাঁও জলে। ‘লাল ফিতের’ ফাঁসে আটকে রয়েছে প্রকল্প। কলকাতায় সেচ দপ্তরের সেন্ট্রাল ডিজ়াইন অফিসে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ফাইল আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেতু তৈরির কাজ কবে শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না সরকারি আধিকারিকরাই।
স্বাধীনতার পরে কোচবিহার জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তুফানগঞ্জ মহকুমার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত— রামপুর–১, রামপুর–২ এবং ফলিমারি। এখানকার এক লক্ষের বেশি বাসিন্দাকে তুফানগঞ্জ কিংবা কোচবিহারে আসতে হলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। আলিপুরদুয়ার শহর ছুঁয়ে পৌঁছতে হয় কোচবিহারে। না-হলে আলিপুরদুয়ার জেলার বারোবিশা, কামাখ্যাগুড়ি হয়ে কোচবিহারে আসতে হয়। রায়ডাক নদী তিনটি পঞ্চায়েত এলাকাকে কোচবিহার জেলার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
দীর্ঘ দিনের দাবির কথা মাথায় রেখে এখানে সেতু নির্মাণের কথা ২০২৪-এর রাজ্য বাজেটে ঘোষণা করা হয়। সেই মতো গত বছর পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকরা রায়ডাক নদীর পাড়ে শালডাঙা এলাকা সরেজমিনে দেখেন। প্রায় ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির জন্য খরচ ধরা হয় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। সেতু তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই হয়েছে। কিন্তু আটকে গিয়েছে সেচ দপ্তরের বাকি কাজ। কোচবিহার হাইওয়ে ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুরজিৎ সরকার বলেন, 'সেতু তৈরির কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। সেচ দপ্তরের কিছু অনুমতি প্রয়োজন। যেখানে সেতুটি তৈরি হবে সেখানকার জলের পরিমাপ, গতি, জল অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা— এ সব ঠিক করে দেবেন তাঁরা। তার পর ডিজ়াইন বানিয়ে ডিপিআর বানানো হবে।'
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, নদীতে জল বেশি থাকার সময়ে তাঁদের ভরসা নৌকো। শীতকালে জল কমে গেলে সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়। জালধোয়াতে সেতু না থাকায় এখনও ঘুরতে হচ্ছে বহু পথ। সেতুর জন্য অপেক্ষায় অধৈর্য হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। তুফানগঞ্জ মহকুমা এলাকার বিজেপি নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য সুশান্ত রাভার অভিযোগ, 'ভোট এলেই সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু কোচবিহার নয়, আলিপুরদুয়ার জেলা এবং নিম্ন অসমের মানুষও এই সেতু হলে উপকৃত হবে। এতে এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হবে।'
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, 'সেতু তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। আশা করছি, আগামী অর্থবর্ষে কাজ শুরু হবে। কিছু টেকনিক্যাল বিষয় থাকতে পারে। তার জন্যই হয়তো একটু দেরি হচ্ছে।'