• ধস, জল সঙ্কট, হাহাকার হাওড়ায়! বিপর্যয়ের কারণ কী? কোন পথে সমাধান?
    এই সময় | ২৩ মার্চ ২০২৫
  • এক দিকে ধসের জেরে বহু বাড়িতে ফাটল। অন্যদিকে জলের জন্য হাহাকার। ঘর ছাড়া হওয়ার আতঙ্কে হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ। পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন হাজার হাজার এলাকাবাসী। সঙ্গে রয়েছে জঞ্জালের স্তূপ থেকে ছড়ানো মিথেন গ্যাসের আতঙ্ক। এর শেষ কোথায়? সঙ্কট শুরুই বা কোথা থেকে? উত্তর খুঁজল এই সময় অনলাইন।

    আবর্জনার পাহাড় থেকে ফাটল

    বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে রয়েছে ১০-১৫তলা উচ্চতার জঞ্জালের পাহাড়। দীর্ঘদিন ধরে হাওড়া পুর এলাকা-সহ বিস্তীর্ণ অংশের বর্জ্য জমা পড়ে চলেছে সেই ভাগাড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাটির ধারণ ক্ষমতার (Soil Bearing Capacity) তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ জঞ্জাল জড়ো করা হয়েছে সেখানে।

    ভেঙে পড়ছে বাড়ি

    বৃহস্পতিবার থেকেই ভাগাড়ের ১০-১৫তলা উঁচু আবর্জনার পাহাড়ে আড়াআড়ি ভাবে ফাটল ধরতে শুরু করে। শুরু হয় ধস। ভাগাড় সংলগ্ন অঞ্চলে রাস্তার ফাটল এক ইঞ্চি থেকে বেড়ে ১০-১২ ইঞ্চি হয়ে যায়। শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় আরও কয়েকটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। অনেকের ঘরের মেঝে ভেঙে নীচে ঢুকে যায় বলে অভিযোগ।

    জলের সঙ্কট

    জঞ্জালের স্তূপে ধসের কারণে উত্তর হাওড়া, শিবপুর ও মধ্য হাওড়ার একাংশে পানীয় জল সরবরাহকারী মূল পাইপলাইন ফেটে যায়। শুরু হয় পানীয় জলের সঙ্কট। কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য তৈরি কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে পড়ে। সদ্য তৈরি করা নিকাশি নালাতেও ভাঙন ধরে। জলের সমস্যা মেটানোর জন্য বেনারস রোডের বেলগাছিয়া মোড় পর্যন্ত এসে কাজ বন্ধ হয়ে থাকা একটি পাইপলাইন বসাতে শুরু করে পুরসভা ও কেএমডিএ।

    কেন ধস? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

    রবিবার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট -এর (Air and Water) বিজ্ঞানীরা বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এই দলে নেতৃত্ব দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও কমিটির প্রেসিডেন্ট ডঃ সাধন কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ আলাদা করে সেটিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য (Recycling) করার কাজ সারা ভারতে হচ্ছে। আমি বলবো, এ রাজ্যের প্রতিটি পুরসভার নতুন উদ্যোগ নিয়ে এই কাজ করা হোক।’ অতিরিক্ত জঞ্জাল ফেলার কারণেই এই বিপর্যয়? অধ্যাপক বলেন, ‘অবশ্যই এখানে অনেক বেশি বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয়েছে। মাটির ধারণ ক্ষমতার থেকে সেটা অনেক বেশি। আমার পরামর্শ, এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড এক্ষুনি বন্ধ করতে হবে। না হলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে। এই এলাকার কয়েক কিমির মধ্যে কোনও ডাম্পিং করা চলবে না।’ এই ভাগাড়ের নিকটবর্তী প্রায় এক কিমি জায়গা বিপজ্জনক অবস্থায় আছে বলে দাবি করেন তিনি।

    পুরসভা কী বলছে?

    হাওড়া পুরসভার কমিশনার বন্দনা পখরিওয়াল বলেন, ‘অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী, সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে। রাস্তাঘাট সংস্কার, নিকাশি ব্যবস্থা , ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যা রিপোর্ট আমরা হাওড়া জেলাশাসককে জানাবেন। সেখানে উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক হবে। তার পরে সেই ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী পদক্ষেপের জন্য।’ পুর কমিশনার জানান, ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বেলগাছিয়া আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুত সেটা সম্পন্ন করা হবে।

    রবিবার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, পুরসভার আধিকারিকরা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন বিশেষজ্ঞ প্রফেসার বৈঠকে বসেন। জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া জানান, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সয়েল টেস্ট করা হবে।  জঞ্জালের যে পাহাড় আছে তা কমানো হবে। ‘বায়োমাইনিং’-এর মাধ্যমে প্রসেস করা হবে। এর জন্য যতটা প্রভাব পড়তে পারে, সেই এলাকার বাড়ি খালি করতে হবে। সেই কাজ আগামীকাল থেকে শুরু হবে।

  • Link to this news (এই সময়)