• হাইকোর্টের নির্দেশে মনোনয়ন জমা দেন বাম প্রার্থীরা, মেদিনীপুরের সেই সমবায়ও জিতে নিল তৃণমূল
    এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৫
  • ২০১৪-র পর ২০২৫। ১১ বছর পর হল নির্বাচন। মনোনয়ন পর্বেই ব্যাপক অশান্তি ঘিরে রাজ্যবাসীর নজরে এসেছিল মেদিনীপুর শহরের পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। আদালতের নির্দেশে মনোনয়ন জমা দেন চার বাম প্রার্থী। এই সমবায়ের মোট ৫১টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে যায় তৃণমূল প্রার্থীরা। বাকি ৮টি আসনও রবিবার জিতে নিল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। যদিও দিনের শুরুতেই নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয় বাম প্রার্থীরা।  

    গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলতে গেলে তাঁদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। জল গড়ায় আদালত অবধি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের নির্দেশে ২৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন জমা করেন বামেদের চার প্রার্থী অজয় মিত্র, সুকুমার আচার্য, সোমনাথ দেব এবং উত্তম চক্রবর্তী।  বামেদের দাবি ছিল, বাকি ৪৭ জনও (মোট আসন ৫১টি) আদালতের দ্বারস্থ হবেন। যদিও, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

    রবিবার মেদিনীপুর শহরের ৩টি কেন্দ্রের ৮টি আসনে (কর্নেলগোলার ৪টি, মীরবাজারের ২টি এবং কোতবাজারের ২টি) নির্বাচন হল। ৮টি আসনের মধ্যে ৪টিতে (কর্নেলগোলাতে ২টি, মীরবাজারে ১টি ও কোতবাজারে ১টি) বামেদের প্রার্থীরা ছিলেন। তৃণমূলের অবশ্য সব আসনেই (৮টিতেই) প্রার্থী দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৩টি কেন্দ্রের ৮টি আসনেই ৮ জন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হন। বিকেল ৩টে নাগাদ তাঁদের জয়ী ঘোষণা করেন সমবায় আধিকারিক তথা পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার দেবাঞ্জন সেন।

    দেবাঞ্জন সেন বলেন, ‘১৮টি কেন্দ্রের ৪৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ৪৩ জন প্রার্থী। আজ ৩টি কেন্দ্রের ৮টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। ৮ জন প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’ জয়ী প্রার্থীরা হলেন অজয় কুমার সেন, গৌতম ডোগরা, প্রবীর আঢ্য, রাজীব মান্না (কর্নেলগোলা); অভ্রজ্যোতি নাগ ও প্রদীপ কুমার মল্লিক (মীরবাজার), সুদীপ্ত মাইতি ও তারাপদ বারিক (কোতবাজার)।

    রবিবার নির্বাচন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলা ১টা নাগাদ সিপিআইএমের শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির পিপিলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক সংলগ্ন কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চার প্রার্থী-সহ সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম নেতা তথা সমবায় ব্যাঙ্কের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান কীর্তি দে বক্সী বলেন, ‘আমাদের চারজন প্রার্থী আদালতের নির্দেশ পেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি নমিনেশন জমা করে। ওই একই অর্ডারের ভিত্তিতে, ওই দিনই আমরা আরও ১৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার জন্য আরও-র কাছে আবেদন জানাই। কিন্তু, রিটার্নিং অফিসার কর্ণপাত করেননি। তাই আমাদের চার প্রার্থীও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চলেছে। সেখানেই যা নির্দেশ হবে, দেখা যাবে।’

    জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুকুমার পড়্যা বলেন, ‘এ সব সিপিআইএমের নাটক। নির্বাচন যখন শুরু হয়ে গিয়েছে, সেই সময় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা কেন? অনেক বামপন্থী শেয়ার হোল্ডাররাও আজ (রবিবার) ভোট দিয়েছেন।’



    উল্লেখ্য, মেদিনীপুর শহরের পিপিলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মোট ভোটার বা শেয়ার হোল্ডার প্রায় ১৬ হাজার। যে ৮টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে ভোটার প্রায় ২ হাজার। তবে, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভোট দিয়েছেন মাত্র হাজারের কাছাকাছি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘সমবায় নির্বাচনে এরকমই ভোট পড়ে। নির্বিঘ্নে আজ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ৫১টি আসনে নির্বাচন হলেও, ৫১টি আসনেই মা-মাটি-মানুষের প্রার্থীরা জয়ী হতেন। যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের অভিনন্দন জানাই। তাঁদের মধ্য থেকেই ১২ জন বোর্ড মেম্বার হবেন এবং একজন চেয়ারম্যান।’

  • Link to this news (এই সময়)