• জঙ্গল এখন ‘রয়্যাল’, তাই ‘সাফারি’ চাইছে পুরুলিয়া
    এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৫
  • সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

    হাতির পাল তো খুব স্বাভাবিক। জেলায় ইতিউতি সংসার পেতেছে লেপার্ড। জঙ্গলে রয়েছে ভালুক, হায়না, নেকড়ে, গোল্ডেন জ্যাকল। খাদ্যশৃঙ্খলের ভারসাম্য মেনে হরিণ, প্যাঙ্গোলিন, গন্ধগোকুল, রাস্টি স্পটেড ক্যাট, নানা রকমের পাখির বসতিও ছিল। সবার সঙ্গে এ বার বনে দর্শন দিয়েছেন স্বয়ং রাজা।

    রয়্যাল‍ বেঙ্গল টাইগার! বঙ্গের জঙ্গলে এত বৈচিত্র ভাবলে এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের কথাই মাথায় আসত। তবে গত কয়েক মাসে সেই উত্তরকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে এগিয়ে এসেছে পুরুলিয়া। দক্ষিণবঙ্গের এই রুখা জেলাতেও তাই এ বার জঙ্গল সাফারি করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বন দপ্তর। শুরু হয়েছে সার্ভের কাজও।

    সাফারি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ। তাঁর কথায়, ‘বর্তমানে পুরুলিয়া জেলা বন এবং বন্যপ্রাণ — দু’দিক থেকেই জীববৈচিত্রের সম্ভারে সেজে উঠেছে। এখানে নাম না জানা বহু গাছ রয়েছে। বাঘের বিচরণভূমি তৈরি হচ্ছে। রয়েছে বিরল–দ্রষ্টব্য নানা প্রাণী।

    এখানে সাফারি চালু করা গেলে স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই দূষণমুক্ত গাড়ি নিয়ে সেই সব জায়গা দেখাবে, যেখানে এমনিতে যাওয়া যায় না। এতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।’ অঞ্জনের কথায়, ‘অযোধ্যা পাহাড়ে সারা বছর জলপ্রপাত বয়ে চলেছে। এখানে লেপার্ড, ভালুকের মুভমেন্ট আছে। কিছু কিছু প্রাণী পাওয়া যাচ্ছে যার রেকর্ড রাজ্যে ছিল না। পুরুলিয়া জীববৈচিত্রের দিক থেকে উত্তরবঙ্গকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গের মতো পুরুলিয়াও পর্যটন শিল্পের অভিমুখ হবে।’

    গত কয়েক বছরে বিপুল ভাবে পর্যটন বেড়েছে পুরুলিয়ায়। অযোধ্যা পাহাড় সার্কিট, গড়পঞ্চকোট বা বান্দোয়ান সার্কিট— জেলার সব প্রান্তেই রয়েছে গভীর অরণ্য। সঙ্গে জুড়েছে পলাশ পর্যটন। গরমের কয়েক মাস ছাড়া প্রায় সারা বছরই পুরুলিয়ায় আসছেন পর্যটকরা। তাই জঙ্গল সাফারির জন্য দীর্ঘদিন বন দপ্তরের কাছে দরবারও করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

    বাঘমুন্ডি লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজিত কুমারের বক্তব্য, ‘লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা বহু জায়গা রয়েছে। সেখানে পর্যটকরা যেতে পারবেন। যেমন বাদলিধা নদী, ডাউরি খাল, মাঠা হিল, মুরগুমা ও গোয়ালিকচার গভীর অরণ্য। সাফারি শুরু হলে এই জায়গাগুলিতে যেমন যাওয়া যাবে, তেমনই সজারু, ময়ূর, হায়না দেখতে পাবেন উৎসাহীরা। এতে পর্যটকরা বার বার পুরুলিয়া এলেও একঘেয়ে লাগবে না।’

    কলকাতা থেকে পুরুলিয়ার চড়িদায় মুখোশ গ্রামে বেড়াতে আসা দীপা পানিগ্রাহী, সুদেষ্ণা বসাকরা বলেন, ‘পুরুলিয়ায় জঙ্গলের ভিতরে ঘোরার ব্যবস্থা নেই, যা উত্তরবঙ্গে রয়েছে। এখানে তেমন কিছু হলে আকর্ষণ বাড়বে।’

    গাইডের কাজ করেন আড়শার রাজু ওরাঙ্গ। সাফারি চালু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু পাহাড় দেখা আর পাহাড়ের জঙ্গলে ঢুকে সামনে থেকে বন্যপ্রাণ দেখা এক নয়। একটু অ্যাডভেঞ্চার থাকলে এখানকার আকর্ষণ অনেক বেশি হবে।’ এ প্রসঙ্গে মুখ্য বনপাল (সেন্ট্রাল) এস কুলানডাইভাল বলেন, ‘ইকো ট্যুরিজ়ম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)