• ছাড়পত্র পেয়েও জলে ডুবে কোটি টাকার কালো হিরে
    এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র মিলেছিল অনেক আগেই। কিন্তু সেখানেই শেষ! পশ্চিম বর্ধমানের রামনগর কোলিয়ারি অঞ্চলে জলের নীচেই রয়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকার কয়লা।

    অথচ এই কোলিয়ারি অঞ্চল সেল–এর (স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) অন্তর্গত। কিন্তু জল সরিয়ে কয়লা তোলার কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। প্রাথমিক হিসেবে দেখা গিয়েছে, জলে ডুবে থাকা সেই কয়লার পরিমাণ হবে প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন, যার দাম কয়েকশো কোটি টাকা তো হবেই। তা হলে কেন এই উদাসীনতা?

    ওই সমস্ত কয়লা খনিগুলির সমস্যা মিটিয়ে যাতে দ্রুত সেল–এর কোল ডিভিশন দপ্তর ব্যবস্থা নেয়, তার জন্য সিটু–র স্টিল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সম্পাদক সুজিত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি ডেপুটেশন জমা দিয়েছে রামনগর কোলিয়ারির জেনারেল ম্যানেজারকে।

    গত শুক্রবার সংগঠনের পক্ষ থেকে দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকেও চিঠি দিয়েছে। সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের বক্তব্য, ‘কোটি কোটি টাকার কয়লা জলের নীচে পড়ে রয়েছে। এ ভাবে জাতীয় সম্পদকে নষ্ট করা যায় না। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার খনিগুলিকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে। তা হতে দেবো না। মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব, প্রয়োজনে মন্ত্রীকেও চিঠি লিখব দু’একদিনের মধ্যে।’

    কুলটি থানার অন্তর্গত লাইকডি কোলিয়ারিতে উন্নত মানের ১০ লক্ষ টন জ্বালানিযোগ্য কয়লা সাত বছর ধরে জলের নীচে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়াও অন্য একটি খনিতে রয়েছে দু’মিলিয়ন টন কয়লা। শ্রমিক সংগঠনের বক্তব্য, এই মুহূর্তে বাজারে এক টন কয়লার মূল্য আট হাজার টাকা। কাজেই কোনও কারণ ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ কয়লা জলের নীচে ফেলে রাখার নেপথ্যে নিশ্চয়ই অন্য কোনও কারণ লুকিয়ে রয়েছে। টানা তিন মাস এখানে তিনটি পাম্প দিয়ে জল তোলা হলে এই বিপুল পরিমাণ কয়লা ওঠানো যায়।

    বেগুনিয়াতেও ছয় মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। অথচ ১০ বছর আগেই পরিবেশ দপ্তর ছাড়পত্র দিয়েছে এই কোলিয়ারিকে। কুলটির রামনগরের ২৩ মিলিয়ন টন কয়লা আছে। গত আট বছর ধরে সেই কোলিয়ারি চালু করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেন এই উদাসীনতা, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সেল কর্তৃপক্ষ।

    সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলছেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ।’ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, ‘ঠিক মতো উদ্যোগ নেওয়া হলে কয়েকশো কোটি টাকার কয়লা ওঠাতে পারত সরকার। কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ত।’

    রামনগর কোলিয়ারির জেনারেল ম্যানেজার জসিম আহমেদ বলছেন, ‘রামনগর অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ কয়লা তোলার জন্য বিসিসিএল–এর সঙ্গে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার একটা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে প্রজেক্ট রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল। যে খনিগুলিতে কয়লা জলে ডুবে আছে, তা নিয়ে টেন্ডার দেওয়া হলেও কোনও সংস্থা এখনও এগিয়ে আসেনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রেও আবার জমি সংক্রান্ত সমস্যা আছে। এই সমস্ত খনিগুলি চালু হলে কিছু মানুষ তো কাজ পাবেনই।’

  • Link to this news (এই সময়)