সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর
শীত পড়তেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি ভিড় করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন ঝিলে পরিযায়ী পাখি এক বিশেষ আকর্ষণ বলা যায়। শীত শেষে তারা আবার দল বেধে ফিরে যায় নিজের ঠিকানায়।
কিন্তু শীত পেরিয়ে গেলেও এখনও কিচিরমিচির আওয়াজে মুগ্ধ চন্দ্রকোণা টাউনের বাসিন্দারা। ওই এলাকার মল্লেশ্বরপুরের মাদ্রাসার পাশের দিঘিতে শীতের সময়ে এসেছিল হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা সাইবেরিয়া থেকে এসেছে। কিন্তু শীত শেষেও গরমের রোদ গায়ে মেখেই তাদের দেখা যাচ্ছে ঝিলের আনাচে কানাচে।
প্রত্যেক বছর শীতের মরশুমে পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু জলাশয়ে বিভিন্ন ধরনের পাখি আসে। জলাশয়গুলির মধ্যে অন্যতম ঘাটালের হরিসিংপুর পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন জলাশয়। এখানে দূর দূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমীরা পাখি দেখতে আসেন। ঘাটালের হরিসিংপুরের পাশাপাশি ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোণা টাউনের মল্লেশ্বরপুর মাদ্রাসার পাশের দিঘিতেও বছর তিনেক শীতের অতিথিদের আনাগোনা বেড়েছে।
সংখ্যাটা প্রতিছর বাড়ছে বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয়দের কথায়, ‘বিগত তিন বছর দেখছি এই জলাশয়ে বালিহাঁসের মতো দেখতে পাখি আসছে। প্রতিবছর শীতের শেষে পাখিগুলি চলে যায়। কিন্তু এ বার দেখছি শীত শেষ হয়ে বসন্ত পার হয়ে গেল, গরম পড়ে গিয়েছে। কিন্তু পাখি যাচ্ছে না। আশ্চর্যের বিষয়, কয়েকশো পাখি এখনও জলাশয়ে থেকে গিয়েছে।’
চন্দ্রকোণার স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক পাঁজা বলেন, ‘সাধারণত নিরিবিলি, ফাঁকা জলাশয়ে পাখির আনাগোনা দেখি। ব্লক শহরের মাঝে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ভাবে নিশ্চিন্তে বিদেশি পাখির দল থেকে যাচ্ছে, তা দেখে আমরা অবাক। যতদূর জানি পশুপাখিরা জায়গাটিকে নিরাপদ না ভাবলে থাকে না। কিন্তু এখানে বিশাল জলাশয়ে পাখিগুলি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের কিচিরমিচিরে মুগ্ধ আমরা।’
পাখিপ্রেমী অতনু সামন্ত বলেন, ‘এ ধরনের পাখি সবসময় একটু শান্ত পরিবেশ খোঁজে। কিন্তু এই জলাশয়ের চারিদিকে বাড়ি, পাশ দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। তারপরেও পাখিগুলি রয়েছে। যাতে পাখিগুলিকে কেউ বিরক্ত না করে সে দিকটা বন দপ্তর ও এলাকাবাসীর দেখা উচিত।’
তবে পরিবেশপ্রেমীরা পাখিদের এই এলাকায় থেকে যাওয়াকে ভালো ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। পরিবেশপ্রেমী তথা শিক্ষক হেদায়েতুর রহমান বলেন, ‘আমি দেখে অবাক। রীতিমত গরম পড়ে গিয়েছে। তার পরেও শীতের অতিথিরা যাচ্ছে না। জলাশয়টি পরিষ্কার। অথচ এই সমস্ত পাখিরা একটু ঝোপঝাড় খোঁজে। কিন্তু এটি খুব ভালো ইঙ্গিত।’
বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘চন্দ্রকোণা টাউনের মল্লেশ্বরপুরে এত পাখি আসে জানা ছিল না। বেশির ভাগ পাখিই সাইবেরিয়া থেকে আসে। অনেক পাখি রেসিডেন্সিয়াল হয়ে থেকে যায়। এরাও হয়তো নিরাপদ ভেবে এই জলাশয়ে থেকে যাচ্ছে। পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে, সে দিকটা আমরা দেখব। প্রয়োজনে এলাকায় বোর্ড লাগাব।’