সুপ্রকাশ চক্রবর্তী ■ হাওড়া
হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামার কয়েক দিন আগেই হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ৯ কোটি টাকা খরচ করে বর্ষার আগে হাওড়ার নিকাশি নালার সংস্কার করা হবে। তার সিংহভাগ খরচ হবে বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন পচা খাল সংস্কারের জন্য, যাতে শহরের বেশির ভাগ জল বেলগাছিয়া পচাখাল হয়ে সরস্বতী নদী দিয়ে গঙ্গায় ফেলা যায়। কিন্তু তার দু’দিন কাটতে না কাটতেই, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে বিশাল ধস নেমে সম্পূর্ণ বুজে যায় এই খাল।
এর ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়ার জলনিকাশি ব্যবস্থা। এক দিকে পানীয় জলের পাইপ ফেটে জল সরবরাহ বন্ধ, অন্য দিকে ভাগাড়ে ধস নামার ফলে অবরুন্ধ নিকাশি খাল। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থা হাওড়া শহরের। ইতিমধ্যেই উত্তর হাওড়ার যে বামুনগাছি এলাকায় এই নিকাশি নালা বেলগাছিয়া ভাগাড়ের দিকে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে নোংরা জল জমতে শুরু করেছে। এক দিকে পানীয় জলের অভাব, অন্যদিকে নোংরা জলের দুর্গন্ধ সবমিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা বাসিন্দাদের। হাওড়া পুরসভার আধিকারিকরা বা বেলগাছিয়া ভাগাড় পরিদর্শনে যে সব বিশেষজ্ঞ দল বারে বারে আসছেন, তাঁদের কাছে বাসিন্দারা বারবার বিক্ষোভে ফেটে পড়লেও, এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহার পথ তাঁরা খুঁজে পাননি।
রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এয়ার অ্যান্ড ওয়াটার–এর নির্দেশক ডক্টর সাধনকুমার ঘোষ। তিনি জানান, কোভিডের সময়েও তিনি এই ভাগাড় পরিদর্শনে এসে পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ভাগাড় স্থানান্তকরণের জন্য। না হলে, এই নিকাশি নালার পথ ওয়ে ব্রিজের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য, যাতে বড় বিপদের সম্মুখীন হতে না হয়। তা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশি নালার পাশে জঞ্জালের ধস নামতে দেখেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন ধস নেমে নিকাশি নালা পুরোপুরি বন্ধ। এই মুহূর্তে পৌরনিগমের কাছে বিকল্প পথ একটাই, তা হলো, বেলগাছিয়া ভাগাড়ের সামনে দিয়ে এই নিকাশি নালার পথ ঘুরিয়ে দেওয়া।
না হলে এ বারের বর্ষাতেও পুরোপুরি ভাসতে হবে শহরের বাসিন্দাদের। সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রবিবার থেকে উত্তর হাওড়ায় বিকল্প জলের পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বার চেষ্টা চলছে, নিকাশি নালাকে কী ভাবে সচল করা যায়। যদিও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেলগাছিয়া পচাখাল সংলগ্ন যে জঞ্জালের পাহাড় রয়েছে, সেই পাহাড়ের তিন থেকে চারটি স্তর নীচের দিকে ঝুলে রয়েছে। তাই খাল কেটে পরিষ্কার করতে গেলে, সেই জঞ্জালের স্তর হুড়মুড়িয়ে আবার নীচে নেমে যাবে। তাই এই নিকাশি নালা সংস্কার করতে যাওয়াও ঝুঁকিপুর্ণ। আর এত বিশাল পাহাড়ের জঞ্জাল দ্রুত কেটে সরিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। তাই কী হবে বর্ষায়, তা ভেবে শিউরে উঠছেন বাসিন্দারা।