এই সময়, ভাঙড় ও বারুইপুর: গত বছর সে ভাবে ফলন হয়নি। তাই এ বছর বিপুল ফলন হবে এমনটাই আশা দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমচাষিদের। সেই পূর্বাভাস মিলে গিয়েছিল ছোট বড় প্রতিটি আম গাছে মুকুলের বাহার দেখে। বেশ কিছুদিন হল মুকুল থেকে ছোট ছোট আমের গুটি বেরিয়েছে।
কোনও কোনও গাছে আবার ছোট ছোট ফল ধরেছে। গত শুক্রবার কালবৈশাখীর পূর্বাভাসে ঘুম উড়েছিল জেলার আমচাষিদের। কিন্তু শুক্র ও শনিবার হালকা বৃষ্টিতে স্বস্তি পেলেন চাষিরা। ভাঙড়, ক্যানিং, সোনারপুর, রাজারহাট, বারুইপুর সর্বত্র কম বেশি বৃষ্টি হলেও কোনও ঝড় হয়নি। এমন বৃষ্টিতে বোঁটা শক্ত হয়ে দ্রুত বড় হবে আম।
হালকা বৃষ্টি হওয়ায় খুশি গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষিরাও। হালকা বৃষ্টিতে মাঠে জল না জমায় সব্জি গাছগুলো তাজা হয়ে উঠেছে। ফলে অকাল বৃষ্টিতে মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। বিশেষ করে ধানচাষিরা খুব খুশি। আগামী কয়েকদিন আর পয়সা খরচ করে জলসেচ করতে হবে না তাঁদের।
জেলার কৃষি ও উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে খবর, এই মুহুর্তে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসাবে উচ্ছে, বেগুন, কুমড়ো, লাউ, পটল, ঝিঙে, লঙ্কার মতো সব্জি চাষ হচ্ছে। জেলায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের গাছ আছে। এ সময় মাঠে শোভা পাচ্ছে গাঁদা, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা। শুধু ভাঙড়–১ ব্লকেই ১২০০ হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। ভাঙড়–২ ব্লকে প্রায় ২৫০০ হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। তবে গত দু’দিনের বৃষ্টিতে সব্জি চাষে কোনও প্রভাব পড়েনি।
ভাঙড়ের আম চাষি আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত বছর আমের ফলন মোটে হয়নি। এ বছর প্রচুর মুকুল হয়েছে। আশা করছি খুব ভালো ফলন হবে। অসময় বৃষ্টি হওয়ায় আম চাষের খুব উপকার হল। এটা প্রকৃতির আশীর্বাদ আমাদের কাছে।’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে আম, ধানের খুব উপকার হলো।’
শুক্রবার ও শনিবার এই দুই দিনের বৃষ্টিতে খুশি ফলের শহর বলে পরিচিত বারুইপুরের ফলচাষিরাও। এখানে অধিকাংশ বাগানেই আম, লিচু, পেয়ারা–সহ একাধিক ফলের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় হাজার দশেক চাষি। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফলের ব্যবসা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ফল বিক্রেতারা এখানকার ফলের উপরেই নির্ভরশীল। সেই বারুইপুরে এ বার দু’দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে লাভের মুখ দেখার সুযোগ মিলেছে বলে দাবি ফলচাষিদের।
এই সময়ে বারুইপুরে বাগানগুলিতে হরেক প্রজাতির আম ও দেশি, বোম্বাই প্রজাতির লিচু ফলতে শুরু করেছে। সঙ্গে রয়েছে পেয়ারা। চাষিদের বক্তব্য, আম ও লিচুর বোঁটা শক্ত হবে এই বৃষ্টিতে। ফলে আগামী দিনে গাছ থেকে ফল ঝরে পড়বে কম। বারুইপুর কাছারি শখের বাজার চাষি সমিতির কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘এই বৃষ্টিটা আমাদের খুবই উপকারে এসেছে। প্রত্যেক ফল চাষি এ বার বেশি মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা।’