ছুটির দিনে উত্তরবঙ্গের চার জেলায় পথের বলি হলেন সাত জন। এর মধ্যে দু’জন মহিলা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উল্টেদিক থেকে আসা বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে মানুষজনের। দু’টি জায়াগায় দুর্ঘটনার জেরে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একদিনে এত লোকের মৃত্যুতে পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা গিয়েছে।
এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে মালদায়। সেখানে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হলো তিন বন্ধুর। মৃত তিনজনই মোটরবাইকে ছিলেন। লরির চাকার তলায় পড়েই পিষ্ট হয়ে যায় তিন বন্ধুর দেহ। রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ মর্মান্তিক এই পথ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মালদার বৈষ্ণবনগর থানার ১৮ মাইল এলাকার ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনার পরে আশেপাশের লোকজন চলে এলে লরি ফেলে পালিয়ে যান চালক এবং খালাসি। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তিনজনের দেহ উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। লরির ধাক্কায় মোটরবাইকটিও দুমড়ে–মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরে জাতীয় সড়ক বেশ কিছুক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সাবির আলম (২৪), রমজান শেখ (১৯) এবং সাদিকাতুল ইসলাম (২০)। তিনজনেরই বাড়ি মোথাবাড়ি থানার মেহেরাপুর এলাকায়। দু’মাস আগে সাবির কেরলে দিন–মজুরির কাজ করতে গিয়েছিলেন। ইদের আগে এ দিনই কেরল থেকে গ্রামের বাড়িতে ফারাক্কা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামেন সাবির। রমজান ও সাদিকাতুল তাঁকে স্টেশন থেকে আনতে যান। ১৮ মাইল এলাকায় জাতীয় সড়কে পিছন থেকে পণ্য বোঝায় লরিটি বেপরোয়া ভাবে এসে ওই তিনজনকে ধাক্কা মেরে চাকার তলায় পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের। তিনজনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সাবিরের কাকা রিন্টু শেখ বলেন, ‘সাতসকালে জানতে পারি দুর্ঘটনার কথা। এর আগেও ১৮ মাইল এলাকায় এরকম দুর্ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। পুলিশের নজরদারির অভাবে ভারী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১৮ মাইলের জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকাটি ঘন জনবসতিপূর্ণ । রাস্তার ধারে বাজার, হাট, দোকানপাট রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে। লাভ হয়নি। মোথাবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওই এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়নের বিষয়ে জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’ জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, লরিটি আটক করা হয়েছে। চালক, খালাসির খোঁজ চলছে।
এ দিকে রবিবার সন্ধ্যায় পথ দুর্ঘটনায় এক বাইক আরোহী–সহ এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের কালচিনি থানার ৩১/সি জাতীয় সড়কের পোরো বাসস্টপের কাছে। অভিযোগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সান্তালাবাড়ির দুই যুবক বিবেক রাই (২৮) ও অনুপ ছেত্রী যখন কালচিনি থেকে ৩১/সি জাতীয় সড়ক ধরে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন একটি অসমমুখী লরি তাঁদের পিছন থেকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিবেকের। সেই সময়ে পোরো বাসস্টপে বাস ধরতে অপেক্ষা করছিলেন এক মহিলা যাত্রী। লরিটি পালানোর সময় তাঁকেও পিষে দিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। ওই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে থাকা আরও দুই যাত্রী অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
একই দিনে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হলো এক মহিলা স্কুটি চালকের। তাঁর নাম দীপিকা দে (৩৬)। তিনি জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ি থানার উল্লাডাবরি এলাকার ফ্লাইওভারে। এ দিন ওই মহিলা স্কুটিতে চেপে জলপাইগুড়ির দিক থেকে ধুপগুড়ি যাচ্ছিলেন। উল্লাডাবরি এলাকায় হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুটি–সহ দীপিকা রাস্তার পড়ে যান। সেই সময় পেছন থেকে আসা একটি ডাম্পার তাঁকে ধাক্কা মারলে গুরুতর আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘাতক ডাম্পার ও গাড়ির চালককে আটক করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুরেও পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো স্কুটি চালক এক যুবকের। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের মহারাজা এলাকায় রাজ্য সড়কে। মৃত যুবকের নাম মহম্মদ মানোয়ার (২৫)। তাঁর বাড়ি রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ার পিরোজপুর এলাকায়। স্কুটি চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে তাঁকে পিছন থেকে একটি জেসিবি ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলের মৃত্যু হয় ওই যুবকের। ঘটনার জেরে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাটোল ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশ গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। (তথ্যসূত্র কৌশিক দে, পিনাকী চক্রবর্তী, বাসুদেব ভট্টাচার্য, নীলাঞ্জন দাস)