• হেরিটেজ হোক মনোহরপুর রাজবাড়ি, দাবি বাসিন্দাদের
    এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৫
  • সুমন ঘোষ ■ দাঁতন

    শচীনদেব বর্মনের খুড়তুতো বোনের বিয়ে হয়েছিল এই বাড়ির ছেলের সঙ্গে। এমনই দাবি করেন গ্রামের বাসিন্দারা। এই রাজবাড়িতে জড়িয়ে আছে মুঘল সম্রাট আকবরের স্মৃতিও। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের মনোহরপুর রাজবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে। রাজ পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা চান, রাজবাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। না হলে এই বাড়ি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। হেরিটেজ ঘোষণার দাবিতে ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরিকে চিঠি পাঠিয়েছেন দাঁতনের তৃণমূল বিধায়কবিক্রম প্রধান। 

    বিক্রম বলেন, 'সংস্কার না করা হলে ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে চলে যাবে। তাই হেরিটেজ ঘোষণার দাবি তোলা হয়েছে।' রাজ পরিবারের সদস্য তীর্থঙ্কর রাও বীরবর বলেন, 'সংস্কারের অভাবে পুরোনো রাজবাড়ি ভেঙে পড়ছে। আমাদের পক্ষে এই বাড়ি সংস্কার করা সম্ভব নয়। হেরিটেজ ঘোষণা হলে পুরোনো ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে।' জানা গিয়েছে, ১৫৬৫ সালে পাঠানরা ওডিশার শেষ হিন্দু রাজা মুকুন্দ হরিশ্চন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধে মৃত্যু হয় রাজার। পাঠানরা ওডিশার দখল নেয়। ১৫৬৫ থেকে ১৫৭৫ সাল পর্যন্ত ওডিশা পাঠানদের দখলে ছিল। ১৫৭৫ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনার হাতে পরাজিত হয় পাঠানরা। 

    দণ্ডভুক্তি অ্যাকাডেমির গবেষক সন্তু জানা জানান, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরিতে মুঘল-পাঠানদের সঙ্গে তুকারুই–এর যুদ্ধের কথার উল্লেখ রয়েছে। সেখানেই প্রমাণ মিলেছে এই রাজবাড়ির সঙ্গে মুঘলদের যোগের কথা। তুকারুই দাঁতনেরই একটি গ্রাম। সেই যুদ্ধে আকবরের সেনাপতি মানসিং, টোডরমলের পাশাপাশি অনেকেই এসেছিলেন। যার মধ্যে ছিলেন আরও এক সেনাধ্যক্ষ মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের অধিবাসী লক্ষ্মীকান্ত উত্তর রাও তথা লছমিকান্ত উত্তর রাও। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি অসীম সাহস দেখানোয় আকবর তাঁকে বীরবর উপাধি দেন। তখন থেকেই লক্ষ্মীকান্ত দাঁতনের উত্তর রায়বাড় গ্রামে থেকে যান। তাঁরই অষ্টম পুরুষ হরেকৃষ্ণ রাও বীরবর পরবর্তীকালে মনোহরপুরে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। উত্তর রায়বাড়ের সেই রাজপ্রাসাদ আর আগের মতো নেই। সংস্কারের অভাবে তার এখন ভগ্নদশা। পড়ে রয়েছে দুর্গাদালানের কিছু অংশ মাত্র। 

    গবেষক জানান, এই পরিবারের অনেক সদস্যই গুণীমানুষ ছিলেন। হরেকৃষ্ণর নাতি কিশোরচরণ রায় বীরবরের ছেলে রাজা রামচন্দ্র রায় বীরবর অখণ্ড মেদিনীপুরের এক সম্পদ ছিলেন। কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের এই এলাকার প্রথম সদস্য ছিলেন তিনি। নাটক রচনা করেছেন। সতেরোটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। প্রথম ক্যামেরাও তিনিই আনান। ১৯২০ সালে তাঁর তোলা ছবিও রয়েছে। তাঁর ছেলে সুরেশচন্দ্র নাটক, যাত্রা লেখার পাশাপাশি তিনতলা নাট্যমঞ্চ তৈরি করেছিলেন। ওই নাট্যমঞ্চটি রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। রাজ পরিবারের সদস্য তীর্থঙ্করের কথায়, 'আমার দাদু নাটক রচনার পাশাপাশি নির্দেশনাও করতেন। এমনকী সেই সময়ে মঞ্চে বর্তমান থ্রিডি লাইটের আদলে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছিলেন।' কী ভাবে সঙ্গীত পরিচালক শচীনদেব বর্মনের সঙ্গে যোগ ছিল এই পরিবারের? তীর্থঙ্কর বলেন, 'সুরেশচন্দ্রের ছেলে ক্ষিতিশচন্দ্রের বিয়ে হয়েছিল ত্রিপুরার রাজকুমারী লতিকার সঙ্গে। তিনি শচীনদেব বর্মনের খুড়তুতো বোন ছিলেন।'

  • Link to this news (এই সময়)