এই সময়, খড়্গপুর: রুই, কাতলা পাতে পড়ে প্রায়ই। কিন্তু রুচি বদলাতে বাজারে চাহিদা রয়েছে ট্যাংরা, শিঙি, মাগুরেরও। চড়া দামের জন্য তা কিনতে গেলেও পিছিয়ে আসেন ক্রেতারা। তাই এই সমস্ত মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে বলে ঠিক করেছে মৎস্য দপ্তর। উৎপাদন বাড়লে কমবে দামও। এর সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের সব মৎস্যজীবীদের রেজিস্ট্রেশন করানোর উপরে জোর দিয়েছে মৎস্য দপ্তর। রেজিস্ট্রেশনের জন্য দুয়ারে সরকার শিবিরে মৎস্যজীবীরা নির্দিষ্ট আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে মৎস্যজীবীদের কার্ড দেওয়া হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে মৎস্যজীবীরা নানা প্রকল্পে সরকারি সাহায্য পাবেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৩ হাজার ২৩টি পরিবারের ২৮,৯১৯ জন মৎস্যচাষির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের বাইরেও বহু মৎস্যজীবী আছেন বলে মৎস্য দপ্তরের অনুমান। জেলায় মাছ উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য দপ্তর মাছচাষিদের মাছের চারা, মাছের খাবার, জল পরিষ্কারের জন্য চুন বিনামূল্যে দেয়। তা ছাড়া মৎস্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয় সাইকেল, ফ্রিজিং বক্স ও ওজন যন্ত্র।
এমনকী মৎস্যজীবীরা যদি মনে করেন মাছ পরিবহণের জন্য তিন চাকার যানবাহন কিনবেন সেক্ষেত্রে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। তফসিলি জাতি ও উপজাতিরমহিলারা এই সুবিধা নিলে তাঁদের ক্ষেত্রে আরও ৬০ শতাংশ বেশি ঋণ দেওয়া হবে। পুরুষরা ঋণ নিলে ৪০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। কিন্তু এই সুবিধা পেতে গেলে রেজিস্ট্রেশন থাকতেই হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মৎস্য দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর সুজন মণ্ডল বলেন, 'আমরা দুয়ারে সরকার শিবিরে জেলার সমস্ত মৎস্যচাষিকে রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করেছিলাম। ব্লকে ব্লকে দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সেই কাজ করেছেন।
এতে রেজিস্ট্রশেনের সংখ্যা আরও বাড়বে। মাছ চাষিরা যাতে সরকারি সব সুবিধা পান, তাই আমাদের এই উদ্যোগ।' এর পাশাপাশি জেলায় শিঙি, মাগুর এবং ট্যাংরা মাছের চাষ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে, এই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি বছরে ৩০০ জন মাছ চাষিকে শিঙি, মাগুর এবং পাঙ্গাস মাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। ট্যাংরা মাছের চারা দেওয়ার বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বলে জানান সুজন। এ ছাড়া প্রায় ৬ হাজার মাছ চাষিকে মাছের চারা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মৎস্য দপ্তর সূত্রের খবর, এক একটি পুকুরের জন্য ১২০০ করে মাছের চারা দেওয়া হবে।
তার মধ্যে ব্যক্তিগত ভাবে চাষ করা মৎস্যজীবী রয়েছেন। আবার স্বনির্ভরগোষ্ঠীও রয়েছে। বড় মৎস্য চাষিদের ক্ষেত্রে কোনও বছর মাছের খাবার দেওয়া হয়। আবার কোনও বছর মাছের চারা দেওয়া হয়। সুজন জানান, আগের বছর মাছের খাবার দেওয়া হয়েছিল। এ বছর মাছের চারা দেওয়া হবে। কিছু দিনের মধ্যে ১২০০ মৎস্য চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে। সেখানে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে, কোন মাছের সঙ্গে কোন মাছ চাষ করা উচিত, উচিত নয়, মাছের রোগ এবং তার প্রতিকার—এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে বোঝানো হবে। তবে এই সব সুবিধা পেতে গেলে রেজিস্ট্রেশন জরুরি বলে জানায় মৎস্য দপ্তর।