বাবা-মায়ের সন্তান হত্যার প্রবণতা ও যৌন হেনস্থা কি শুধুই সমাজমাধ্যমের প্রভাব! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা...
আজকাল | ২৫ মার্চ ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রতিক অতীত বা বর্তমানে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে চলেছে একের পর এক সন্তান হত্যা বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা। গত মাসে ট্যাংরার ঘটনা, শিশু কন্যাসন্তানকে হত্যা কিংবা বাইপাসের ধারে বহুতল আবাসনে পাঁচতলার বারান্দা থেকে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার চেষ্টা যেমন শহর কলকাতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। একই রকম ভাবে মানুষের বিকৃত রুচির প্রমাণ দিয়েছে একাধিক কন্যাসন্তানের তাঁদের পিতা বা পরিজনদের হাতে যৌনহেনস্থার ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা বারবার প্রকাশ্যে আসতেই যেমন সমাজব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে, একই রকম ভাবে এ ধরনের ঘটনার কারণে বিশ্বাস ভরসা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বারবার প্রমাণ করেছে কোথাও যেন একটা সামাজিক ব্যাধি বা অসুখ ঘিরে ধরেছে মানবজীবনকে।
এই বিষয়ে আজকাল ডট ইন সরাসরি কথা বলেছে দুই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অধ্যাপিকা পায়েল তালুকদার ও চিকিৎসক নন্দলাল মাল-এর সঙ্গে। ডঃ পায়েল এই বিষয়ে বিশ্লেষণ করে বলেন, "এর জন্য শুধুই সমাজমাধ্যম দায়ী নয়। এর পিছনে রয়েছে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারণ।'' তিনি বলেন, ''একাকীত্ব অর্থাৎ স্ত্রী ছাড়া কন্যাসন্তান নিয়ে জীবনে এগিয়ে চলা এবং একটা সময় পর সেই কন্যা সন্তানের উপরেই আকৃষ্ট হয়ে পড়া। অ্যান্টি পার্সোনাল ডিসঅর্ডার, যার মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার একটি বড় বিষয়। অধিক পরিমাণে পর্নোগ্রাফি দেখা বা সমাজমাধ্যমের অত্যাধিক ব্যবহার। অপব্যবহার বলা যেতে পারে।'' এখানেই থেমে থাকেননি পায়েল। তাঁর আরও সংযোজন, ''মাদকাসক্তি একটা বড় কারণ। অনার কিলিং অর্থাৎ ভিন ধর্মে বিয়ের ফলে সম্মান বাঁচানোর চেষ্টায় সন্তানকে হত্যা করা। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা অর্থাৎ আমি বাবা, তাই আমি যা খুশি তাই করতে পারি। কর্মজীবনে অত্যাধিক পরিমাণে মানসিক চাপ। যা পরবর্তীতে সন্তানের উপরে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। মূলত এই বিষয়গুলিকে বেশি মাত্রায় গুরুত্ব দিলে এবং সচেতন থাকলে, এ ধরনের ঘটনা থেকে অনেকাংশেই আমরা সমাজকে সুরক্ষা দিতে পারব।"
এই বিষয় নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক নন্দলাল মাল বলেন, "এই ধরনের ঘটনা ঘটার কারণ যেমন সমাজমাধ্যমের কারণে ঘটছে। একই রকম ভাবে মাদকাসক্তি ও সুরক্ষাজনিত বিষয়ে অতি সক্রিয় একটা বড় কারণ।" তিনি বলেন, "মূলত অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মায়েরা নিজেদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার পাশাপাশি সন্তান নিয়েও অনেকাংশে অসুরক্ষিত বোধ করছেন। আর সেই জায়গা থেকেই একটা মানসিক ভারসাম্যহীনতার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবং তারপরে সে নিজে মারা গেলে তারপর তাঁর সন্তানের কী হবে, সেই ভাবনাতেই সন্তানকে হত্যা করেন।''