• কষ্টকল্পনা! বিরোধ নেই নেত্রীর সঙ্গে, দিল্লি থেকে সাফ বার্তা অভিষেকের
    এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে যে নেতারা প্রচার করেন, তাঁরা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণার শিকার বলে মনে করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধ নেই বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর সাফ কথা, দলের সঙ্গে বেইমানি করা তাঁর রক্তে নেই।

    সংসদের বাজেট অধিবেশনের জন্য এখন দিল্লিতে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তৃণমূলের সাংসদীয় টিমের সদস্যদের সঙ্গে সোমবার ঘরোয়া আলোচনার পাশাপাশি এ দিন সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন অভিষেক।

    ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পর থেকেই অভিষেকের রাজনৈতিক রোডম্যাপ নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে নানা জল্পনা, প্রচার শুরু হয়েছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে বিস্তারিত জবাব দিয়েছিলেন অভিষেক।

    সে দিনই অভিষেক বলেছিলেন, তিনি বিজেপিতে যাবেন অথবা নতুন দল করবেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি বেইমান নন। দিল্লিতে এ দিন সাংবাদিকরা সেই জল্পনা নিয়ে ফের অভিষেককে প্রশ্ন করেন। মমতার সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও করা হয়।

    জবাবে অভিষেক বলেন, ‘দলে কোনও বিরোধ নেই। দলের মধ্যে আমাকে, দিদিকে নিয়ে যাঁরা এ সব বলেন, তাঁরা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে প্রচার করেন।’ অভিষেকের পর্যবেক্ষণ, দলনেত্রীর সঙ্গে বিরোধ স্রেফ কিছু লোকের ‘কষ্টকল্পনা’। এঁরাই জল্পনা তৈরি করেন, অপপ্রচার চালান।

    তাঁর কথায়, ‘আমার লিডার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি স্ট্র্যাটেজি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লবি করব? এটা কষ্টকল্পনা।’এই প্রসঙ্গেই নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের কর্মিসভায় তিনি কী বলেছিলেন, তা ফের উল্লেখ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামেই আমি জানিয়ে দিয়েছি, আমার গলা কাটলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারিত হবে। আমি বেইমান নই। না–পোষালে রাজনীতি ছেড়ে দেবো। বেইমানি করব না, ওটা আমার রক্তে নেই।’

    তৃণমূলের সঙ্গে অতীতে কোন কোন নেতা বেইমানি করেছিলেন, তা নেতাজি ইন্ডোরের সভায় খোলাখুলি বলেছিলেন অভিষেক। সেই নেতাদের তিনিই যে চিহ্নিত করেছিলেন, তা–ও তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা–কর্মীদের বলেছিলেন তিনি। অভিষেককে নিয়ে যাঁরা এই সব জল্পনা তৈরি করেছিলেন, তাঁদের অনেকে এ–ও বলেছিলেন যে, তিনি নতুন দল তৈরি করছেন। এ দিন এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘এ সবও রটেছে নাকি? নির্বাচন কমিশনে খোঁজ নিলে আপনারা (মিডিয়া) এক মিনিটেই তো জেনে যাবেন, আলাদা দল হচ্ছে কি না! খোঁজ পেলে জানান আমাকে!’

    ক’দিন আগেই হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। আগামী দিনে গেরুয়া শিবিরের আরও নেতা জোড়াফুলে নাম লেখাতে পারেন বলেও মনে করেন অভিষেক। তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘আমাদের লকগেট খোলা আছে। সময়মতো সব হবে। যেমন কয়েকদিন আগে হলদিয়ায় হয়েছে৷ পাইপলাইনে অনেকেই আছেন।’ বিজেপির সাংসদরাও যে তৃণমূলে যোগদানের লাইনে আছেন, সেই বিষয়ে করা প্রশ্নে ইতিবাচক আভাস দেন তিনি।

    কিছু দিন আগেই তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় চার হাজার নেতা–জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে অভিষেক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে ’২৬–এর বিধানসভা ভোটের সংগঠনের প্রস্তুতি নিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তৃণমূল একাই লড়াই করেই দলের ইতিহাসে সেকেন্ড বেস্ট রেজ়াল্ট করেছিল।

    অভিষেকের পর্যবেক্ষণ, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের কারও সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রয়োজন নেই। যদিও এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অভিষেকের কথায়, ‘২০২৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতার দরকার নেই। ওরা বরাবর সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়েছে। তবে ২০২৬–এ জোট হবে কি না, তা ঠিক করবেন দলনেত্রী।’

    তৃণমূলের ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক একটি হেল্পলাইন নম্বর দলের নেতা–কর্মীদের দিয়েছেন। আইপ্যাক অথবা অভিষেকের অফিসের নাম করে কেউ টাকা চাইলে সেই হেল্পলাইনে অভিযোগ জানানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ দিন তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি নিয়ে আমাদের জ়িরো টলারেন্স নীতি।

    স্পেসিফিক ইনফরমেশন পেলে এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি নিজে কমপ্লেন করব।’ তাঁর সংযোজন, ‘আমার অফিসের তিন জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করিয়েছি থানায় অভিযোগ কর। অন্যায্য কাজ করছিল বলে অভিযোগ এসেছিল। আমি নিজে খতিয়ে দেখি, তারপরে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি। আসলে কয়েকজনের জন্য পুরো দলটা বদনাম হয়ে যায়। কয়েকটি অনভিপ্রেত-অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। সেগুলি না ঘটলেই পারত।’

  • Link to this news (এই সময়)