সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের জেরে পাইপ লাইন ফেটে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ও মধ্য হাওড়া এবং শিবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছিল। সেই সমস্যার কিছুটা সুরাহা হলেও ধসে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নতুন করে ভোগান্তির মুখে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুরসভা সূত্রের খবর, বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামার ফলে উত্তর হাওড়ার প্রধান নিকাশি নালা বেলগাছিয়া পচা খাল সম্পূর্ণ বুজে গিয়েছে। ফলে ওই এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ড্রেনের নোংরা জল আটকে যাওয়ায় উপচে পড়ছে রাস্তায়। তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। এই ভরা গ্রীষ্মেও জমা জলের নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে হাওড়াবাসীকে।
পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বেলগাছিয়া পচা খাল দিয়েই উত্তর হাওড়া এবং বামুনগাছি এলাকার জল সরস্বতী খাল হয়ে গঙ্গায় গিয়ে পড়ে। কিন্তু বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নেমে পচা খাল নোংরা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। তার জন্য ড্রেনের জল আটকে যাচ্ছে। এর ফলে বামুনগাছি এলাকার সি রোড, প্রফুল্ল সেন কলোনি, বিবেক নগর, হরিশ কলোনি–সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তায় নোংরা জল জমতে শুরু করেছে। এ বার নোংরা জল বাড়ি–ঘরদোরে ঢুকতে শুরু করবে।
উত্তর হাওড়ায় পানীয় জল পৌঁছে দিতে বেলগাছিয়া মোড় থেকে একটি বিকল্প পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। তার উপর নোংরা আবর্জনা জমে থাকায় সেই পাইপলাইনটি প্রথমে জল দিয়ে ভালো করে ধোয়া হয়। তার পরই জল সরবরাহ শুরু হয়। তাতে অনেকটা জল নষ্ট হয়। সেই জল আবার বেলগাছিয়া পচা খালে এসে পড়ে। তাতে সমস্যা আরও বাড়ে। বেলগাছিয়া ভাগাড়ের কাছে নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বামুনগাছির বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তাঘাটে জল জমে যায়। তাতে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
সি রোডের বাসিন্দা অসীম পাল বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই আমাদের এলাকায় পানীয় জল ছিল না। রবিবার রাত থেকে পানীয় জল এসেছে। সোমবার সকালে আমার মতো অনেকেই রাস্তার টাইম কল থেকে জল আনতে গিয়েছিলেন। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, ড্রেনের জল রাস্তায় উঠে গিয়েছে। তার উপর দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেকের বাড়িতেও জল ঢুকে গিয়েছে।’
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘মূলত ৭ নম্বর ওয়ার্ডের করপাড়া অঞ্চলে জল জমে যাচ্ছে। সেখানে বড় পাম্প বসিয়ে জমা জল বের করার চেষ্টা হচ্ছে। তার পর স্থায়ী বিকল্প ব্যবস্থা কী করা যায় সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।’
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, নিকাশি নালার উপর যে জঞ্জাল জমে রয়েছে সেটা সরানো হলেও পুনরায় ধস নামলে আবারও সমস্যা তৈরি হতে পারে। একমাত্র বিকল্প উপায় হল নিকাশি নলার পথ ঘুরিয়ে দেওয়া। সেই কাজটাও বেশ সময় সাপেক্ষ। কারণ, সি রোডের দিক থেকে ওই নিকাশি নালা দুটি জঞ্জালের পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বেলগাছিয়া ওয়েব্রিজ পর্যন্ত এসেছে। তার পর সেটা ডানদিকে ‘এফ’ রোডের দিকে বেঁকে গিয়ে সরস্বতী খালের দিকে চলে গিয়েছে। ওয়েব্রিজ থেকে ‘এফ’ রোডের দিকে যাওয়ার অংশটাতেই বেলগাছিয়া ভাগাড়ের আবর্জনায় বুজে গিয়েছে। তার বিকল্প হিসেবে ওয়েব্রিজের পাশ দিয়ে নতুন করে খাল কাটা যায় তার ভাবনা–চিন্তা চলছে।