এই সময়, পানিহাটি: একের পর এক কাউন্সিলারকে হুমকির আবহের মধ্যেই সোমবার পানিহাটির পুরপ্রধান পদে শপথ নিলেন সোমনাথ দে। একরাশ উদ্বেগ এবং আশঙ্কার মধ্যে চেয়ারে বসে নতুন পানিহাটি গড়ার ডাক দিলেও, তিন সতীর্থের কাছে পরপর হুমকি ফোন আসার বিষয়টি যে তিনি ভালোভাবে নিচ্ছেন না তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সোমনাথ। হুমকি ফোনের ঘটনায় যে বা যারা জড়িত এবং পিছনে কাদের মদত রয়েছে তা অবিলম্বে পুলিশকে তদন্ত করে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ দিন পানিহাটি পুরসভার বোর্ডরুমে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ বারিক পুরপ্রধান পদে সোমনাথ দে–কে শপথ বাক্য পাঠ করান। ৩৫ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান মলয় রায়ও।
সংঘাতের আবহ থেকে সরে এসে নতুন পুরপ্রধানকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘দলনেত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ করেছি। দল যে ভাবে নির্দেশ দেবে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করব।’ পাশে বসে সোমনাথ বলেন, ‘আমরা সকলে একটা পরিবার।’ এ দিন শপথ নিয়ে সোমনাথ পূর্ত বিভাগের সিআইসি থাকাকালীন যে ঘরে বসতেন সেখানেই গিয়ে বসেন এবং আপাতত সেখান থেকেই কাজ চালাবেন বলে জানিয়ে দেন। পুরসভার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা ফুল মিষ্টি নিয়ে তাঁর ঘরে হাজির হয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। পুরকর্মীদের উদ্দেশে সোমনাথের বার্তা, ‘কাজে গতি আনতে হবে।’
তবে পুরপ্রধানের চেয়ারে বসার আনন্দের থেকেও তিন সতীর্থের ফোনে শনিবার রাত থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত যে ভাবে পর পর হুমকি ফোন এসেছে তাতে যে তিনি বিচলিত, তা স্পষ্ট করেছেন সোমনাথ। শনিবার রাতে প্রথম হুমকি ফোন আসে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সম্রাট চক্রবর্তীর কাছে। রবিবার সন্ধ্যায় আসে সিআইসি (বিদ্যুৎ) তাপস দে’র ফোনে এবং রাতে উপপুরপ্রধান সুভাষ চক্রবর্তীকেও ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনটি নম্বরই এক। অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ভিন দেশের নম্বর ব্যবহার করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই তিন জনের সঙ্গে তাঁদের পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তিন জনই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবার একটি ফোন কলে পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং তাঁর পুত্র সিআইসি (জল) তীর্থঙ্কর ঘোষের নাম করেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁরা পুলিশে কোনও অভিযোগ করেননি।
এ দিন তীর্থঙ্কর বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে আমার কাছে কোনও হুমকি ফোন আসেনি। আমি এ ব্যাপারে একদম বিচলিত নই।’ উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে কাউন্সিলার অনুপম দত্ত খুনের ঘটনার আতঙ্ক পানিহাটিতে ফিরে এসেছে পরপর এমন হুমকি ফোনের ঘটনায়। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘খুব গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। যে বা যারা যুক্ত তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না। যেহেতু ভিন দেশের নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ফোন কল করা হয়েছিল সে জন্য একটু সময় লাগছে।’ অপরদিকে এই আবহের মধ্যে সোমবার নির্মল ঘোষের বাড়ির ড্রাইভারের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেধেছে। সে দিকটিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।