• লক্ষ্য ২৬-এর ভোট, জোড়াফুলের হাতিয়ার বাংলার বঞ্চনা
    এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বাংলাকে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়েই সবচেয়ে বেশি সুর চড়িয়েছিল তৃণমূল। ’২৬–এর বিধানসভা ভোটেও বাংলায় সেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনাই সবচেয়ে বড় ইস্যু হতে চলেছে বলে জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানান, ইতিমধ্যেই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। বকেয়া অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না–মেটানো হলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের তৃণমূল বড়সড় আন্দোলনে নামবে বলে জানান অভিষেক। সেই কর্মসূচির রূপরেখা কী হবে, তা সঠিক সময়ে জানিয়ে দেবেন জোড়াফুল নেতৃত্ব।

    এ দিন অভিষেক বলেন, ‘রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায্য প্রাপ্য ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই টাকা আটকে রেখে বাংলার সঙ্গে, বাংলার বাসিন্দাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্র। রাজ্যের মানুষ এটা মেনে নেবে না৷’ তাঁর সংযোজন, ‘এই বিপুল অঙ্কের টাকা পেলে আমরা রাজ্যের সর্বত্র আরও উন্নয়ন করতে পারতাম। ব্লকে ব্লকে আরও হাসপাতাল তৈরি করতে পারতাম। এটা হয়নি বিজেপির ষড়যন্ত্রের কারণে। রাজ্যবাসী এটা বুঝে গিয়েছেন।’

    যে হেতু আবাস, ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারই মিটিয়ে দিয়েছে, তাই কেন্দ্রের বকেয়া টাকা পেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থও দ্বিগুণ করা হবে বলে এ দিন জানান অভিষেক।

    ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের কথায়, ‘বিজেপির এক নেতা বলছেন, তিনিই টাকা আটকে রেখেছেন! আর এক জন বলছেন, তিনি এক ফোনে টাকা রিলিজ় করাতে পারেন। ফলে এটা যে ওদের ষড়যন্ত্র, তা আর কারও বুঝতে বাকি নেই। আসলে এই টাকা আটকে রেখে এখন ফেঁসে গিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের মানুষের সঙ্গে ওদের শত্রুতা স্পষ্ট হয়েছে।’

    অভিষেক আরও বলেন, ‘বিজেপি ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। গতবারের বিধানসভা ভোটের পরে ওদের উচিত ছিল বাংলার বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়া। সেটা করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব আমরা। ন্যায্য টাকা আদায় করেই ছাড়ব। ২০২৬-র ভোটে বাংলার বঞ্চনাই হবে সব থেকে বড় ইস্যু।’

    ২০২৩ থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে তৃণমূল। বাংলার শাসকদলের লাগাতার প্রচার এবং দিল্লির মাটিতে আক্রমণাত্মক আন্দোলন, ’২৪–এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের ‘পালে হাওয়া’ টেনেছে। ২০২৩ সালে বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে নিজে ময়দানে নামেন অভিষেক। তাঁর ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি যে তৃণমূল শিবিরে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে, সেই বিষয়টি শাসকদলের ফলেই বোঝা গিয়েছিল।

    এ দিন অভিষেক বলেন, ‘এর আগে দুর্গাপুজোর সময়ে যখন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছিলাম, তখন দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে নিষেধ করলেন, তাই উঠে যেতে হলো! উনি দুর্গাপুজোর কথা বলে আমাকে নিষেধ করেছিলেন৷ আমি বলেছিলাম, বকেয়া টাকার দাবিতে আন্দোলন অনেক বড় হচ্ছে৷ উনি শোনেননি৷ ওঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল।’

    এ দিনই আবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্য সরকারের বরাদ্দ অংশ আটকে রাখার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির রাজ্য সদর দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ৭০১ কোটি টাকা রাজ্য সরকার আটকে রেখেছে। কেন্দ্রের লাইভলিহুড মিশন প্রকল্পের অন্তর্গত এই টাকা। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে রাজ্য সরকার এই টাকা না–ছাড়লে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের কাছে অভিযোগ করব।’

    রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পেশ করা বাজেট থেকেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার বিষয়টি তিনি চিহ্নিত করেছেন বলে শুভেন্দুর বক্তব্য। যদিও চন্দ্রিমার সাফ কথা, ‘বাজেট অধিবেশনে যাঁরা সভায় থাকেন না, তাঁদের মুখে এই সব কথা মানায় না।’

  • Link to this news (এই সময়)