এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ডুপ্লিকেট এপিক নিয়ে ইতিমধ্যেই সংসদের ভিতরে–বাইরে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। দেশের নির্বাচন কমিশনের কাছেও একাধিকবার দরবার করেছেন জোড়াফুলের সাংসদরা। খানিকটা তৃণমূলের চাপের মুখের পড়েই কমিশন আশ্বাস দিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে ডুপ্লিকেট এপিকের সমস্যা মেটানো হবে। যদিও তাতে কোনও ভাবেই সুর নরম করতে রাজি নন তৃণমূল নেতৃত্ব।
সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মিলেয়ে দেখা হবে।
কারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে অভিষেক জানান, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে বিজেপি কমিশনকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য আসল ভোটারের নাম তালিকা থেকে ছেঁটে অজস্র ভুয়ো নাম ঢুকিয়েছে। মূলত এই জালিয়াতি করে দুই রাজ্য দখল করেছে বিজেপি। যদিও ভোটার তালিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে পাল্টা চাপ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির।
এ দিনই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসের সামনে ধর্না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদলের ইশারায় স্থানীয় প্রশাসন উদ্বাস্তুদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে।
এ দিন দিল্লিতে সাংবাদিকদের অভিষেক বলেন, ‘ভোটার তালিকায় নতুন নাম যোগ করা এবং বাদ দেওয়ার উপরে আমরা বুথস্তর থেকে নজরদারি করব।’ তাঁর যুক্তি, ‘দিল্লিতে ভোটার তালিকা থেকে ৩ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১.৭৫ লক্ষ নতুন ভোটারের নাম যোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দিল্লির ৭০টি আসনে ৪.৭৫ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের সুবিধা পেয়েছে বিজেপি।’
তিনি আরও জানান, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আসন নতুন দিল্লি কেন্দ্রের ভোটার তালিকা থেকে ৩৫ হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার ওই কেন্দ্রের ভোটার, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ানের বাড়িতেই শুধু রাতারাতি ২৭ জন ভোটারের নাম যোগ হয়েছে। অভিষেকের কথায়, ‘কেজরিওয়ালজি অনেক দেরিতে বিষয়টি বোঝেন। তখন আর কিছু করার ছিল না।’ তৃণমূলের দাবি, একই ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রেও। সেখানে ২০২৪–এর লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের মধ্যে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে ওই রাজ্যে ৩৯ লক্ষ ভোটার বেড়েছে।
অভিষেকের কথায়, ‘আমাদের রাজ্যে ৭ কোটি ৫৫ লক্ষ ভোটার রয়েছে। আমার সন্দেহ, ভোটের আগে ৩০ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম যোগ করে ২০ লক্ষ আসল ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হবে। ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ ভোটের ব্যবধান দাঁড়াবে। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের ১০ দিন আগে পর্যন্ত তালিকায় নাম তোলা বা বাতিল করা যায়। বাংলার ৯০ হাজার বুথে সাড়ে ৭ কোটি ভোটারের তালিকায় আমরা নজর রাখছি।’ তাঁর অভিযোগ, ‘দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে ৬ হাজার নতুন ভোটারের নাম তালিকায় যোগ করা হয়েছে। পুরোটাই জাল।’ আধার ও এপিক সংযুক্তিকরণ করে লাভ হবে না বলেও মত অভিষেকের।
আবার এ দিন সল্টলেকে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার দু’টি ব্লকে উদ্বাস্তুদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিধি লঙ্ঘন করে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগর–২ ব্লকের দুই প্রশাসনিক কর্তা এই কাজ করতে মাঠে নেমেছেন।’
রাজ্য প্রশাসন এই কাজ থেকে বিরত না–হলে দু’দিন পরেই কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে সামনে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে বাগদা ও কৃষ্ণনগর–২ ব্লকে বিডিও অফিসের সামনেও বিক্ষোভ অবস্থান করবেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের ইঙ্গিতও দিয়েছেন শুভেন্দু।