• ঋণের ফাঁদে কিডনি চক্রের শিকার কমপক্ষে আরও ১০
    এই সময় | ২৫ মার্চ ২০২৫
  • এই সময়, অশোকনগর: চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে তা ফেরানোর জন্য স্ত্রীর কিডনি বেচেও নিস্তার পাননি অশোকনগর কল্যাণগড়ের বাসিন্দা রাজীব দাস। ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়ে মাসে ১৮ হাজার টাকা করে সুদ দিচ্ছিলেন তিনি। পরে ঋণদাতা বিকাশ ঘোষ ওরফে শীতলের পরামর্শেই স্ত্রীর কিডনি বেচার পথ ধরেন রাজীব। অভিযোগ, এ জন্য সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকায় রফা হলেও তার মধ্যে দু’লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করে বিকাশ। হুমকিও দেয় রাজীবকে। পরে অশোকনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজীব। যার ভিত্তিতে বিকাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

    ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, তার চড়া সুদের ফাঁদে এ পর্যন্ত অশোকনগরের অন্তত ১০ জন কিডনি বিক্রি করেছেন। সংখ্যাটা বাড়তে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে, কিডনি–চক্রের জাল বেশ বড়। চক্রের মাথা গা-ঢাকা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশে। ধৃতকে জেরা করে ওই পান্ডাকে গ্রেপ্তারির চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

    পাশাপাশি, গত দু’বছরে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কত জন কিডনি দান করেছেন, তা জানতে সোমবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি দিয়েছে অশোকনগর থানা। এই চক্রে সরকারি অনুমতিও কোনও ভাবে আদায় করা হতো বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বারাসত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খারিয়া বলেন, ‘চক্রের মাথার পাশাপাশি, যারা সরকারি অনুমতি জোগাড় করত, তাদের খোঁজ চলছে। তার পরেই কাজের ধরন পরিষ্কার হবে। যাঁদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের কাছে আবেদন করব, বিষয়টি পুলিশে জানান।’

    অশোকনগরের হরিপুর ভৈরবতলা এলাকায় বিকাশের বাড়ি। পুলিশি জেরায় তার দাবি, ১০ হাজার টাকা ধার দিলে দিনে ১০০ টাকা করে সুদ নিত সে! এই বিপুল সুদে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার মূল টার্গেট ছিল অসহায়, দরিদ্র পরিবার। সেই ফাঁদেই পা দিয়েছিলেন একটি কেটারিং সংস্থার কর্মী রাজীব। ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দিনে ৬০০ টাকা সুদ গুনতেন তিনি। তা দিতে না পারলে পাঁচ হাজার টাকা ফাইনও আদায় করত বিকাশ। এ ভাবে সাত–আট মাসে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা সুদ দেন রাজীব।

    কিন্তু তাতেও আসলের ৬০ হাজার টাকা শোধ হয়নি। বিকাশকে বিষয়টি জানানোর পর সে–ই কিডনি বিক্রির পরামর্শ দেয়। কচুয়ার এক মহিলার সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দেয়। গত ১২ মার্চ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে রাজীব তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করান। ১৪ মার্চ কিডনি বিক্রি হয় বলে খবর। পুলিশ জেনেছে, ২৫ লক্ষ টাকায় এই ‘ডিল’ হয়। যা থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পায় বিকাশ।

    তদন্তে জানা গিয়েছে, ৩৬০ শতাংশ সুদে টাকা ধার দিয়ে দরিদ্রদের ফাঁদে ফেলত সে। ঋণগ্রহীতারা টাকা ফেরাতে না পারলেই শুরু হতো কিডনি বিক্রির ‘খেলা’। এই সূত্রেই কমপক্ষে ১০ জনের কথা জানতে পেরেছে পুলিশ।

  • Link to this news (এই সময়)