সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
দূষণ কমিয়ে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ই-রিকশাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সকলেই। এখন তিন চাকার সেই যানই যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত যানজট থেকে পথ দুর্ঘটনা— অভিযোগের আঙুল উঠছে ওই যানের দিকেই! এ দিকে, এই যান থেকে সরকারের আয় নেই বললেই চলে।
অভিযোগ, ৯০ শতাংশের বেশি ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশনই নেই। ফলে, জেলা জুড়ে কত রিকশা রয়েছে সেই নথিও নেই প্রশাসনের কাছে।
এ বার ই-রিকশা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে উদ্যোগী হলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিবহণ দফতর। জেলাজুড়ে কত ই-রিকশা চলছে তা জানতে পুরপ্রধান ও বিডিওদের চিঠি পাঠাল পরিবহণ দফতর। তথ্য জানার পাশাপাশি চালকদের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের নথিও সংগ্রহ করা হবে। তারপরেই পদক্ষেপ করা হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু হয়েছে ডিলারদের বিরুদ্ধেও। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ই-রিকশা তৈরি হয়। তারপর এক্সাইজ ডিউটি দিয়ে চেসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর-সহ যাবতীয় নথি দিয়ে তা কেন্দ্রীয় সরকারের হোমো লোকেশন পোর্টালে তোলা হয়। টিসি বা ট্রেড সার্টিফিকেট-সহ ডিলারদের দেওয়া হয়। ডিলাররা সেই ট্রেড সার্টিফিকেট দিয়েই গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে ক্রেতাদের। নিয়ম অনুযায়ী, টিসি নিয়ে গাড়ি রাস্তায় চলতে পারে না। রাস্তায় চলতে গেলে রেজিস্ট্রেশন করাতেই হবে।
অভিযোগ, ডিলাররা সে নিয়মের তোয়াক্কা না-করে বেআইনি ভাবে বিক্রি করছেন ই-রিকশা। তার জেরেই বেআইনি ই-রিকশার সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অভিযোগ, বহু বিত্তবান ব্যক্তি ১০-১৫টি ই-রিকশা কিনে নিয়েছেন। তাঁরা দিনে ৫০০-৬০০ টাকার ভাড়ার বিনিময়ে চালকদের দিয়ে দেন। ভাড়ার বেশি যা আয় হবে তা চালকের। ফলে সবাই চান বেশি রোজগার করতে। প্রতিযোগিতার বাজারে দিনভর রাস্তায় রাস্তায় ছুটে চলেছে ই-রিকশা। রেজিস্ট্রেশন না-থাকায় দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও ঝুঁকি নেই মালিকের। কারণ, রেজিস্ট্রেশন না থাকায় মালিককে চিহ্নিতও করা কঠিন। আবার রেজিস্ট্রেশন না-করায় গাড়ি পিছু বার্ষিক ৭২৯ টাকা রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
পরিবহন দফতর সম্প্রতি এমন সাত জন ডিলারের খোঁজ পেয়ে তল্লাশি চালিয়ে দোকান সিল করে দিয়েছে। পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, বেআইনি ভাবে ই-রিকশা বিক্রির জন্য ডিলারদের জরিমানাও করা হয়েছে। ফলে সরকার প্রায় ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি রাজস্ব পেয়েছে। ডিলারদের বিরুদ্ধে এই তল্লাশি অভিযান চলবে বলেই জানিয়েছেন জেলা পরিবহণ আধিকারিক সন্দীপ সাহা।
তিনি বলেন, ‘ই-রিকশা চালকদের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের নথিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ই-রিকশার সংখ্যা জানার পরে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে। চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট এলাকাও ঠিক করে দেওয়া হবে। তখন আর যত্রতত্র ঘুরতে পারবে না ই-রিকশা। কমবে যানজটও।’