শীতল চক্রবর্তী ■ বালুরঘাট
দিনের বেলায় স্কুলে আসে ছেলেমেয়েরা। কিন্তু রাতে এই স্কুল চত্বর চলে যায় সমাজবিরোধীদের দখলে। খোলা থাকে স্কুলের গেট। এর ফলে সেখানে বসছে মদের আসর। স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে বনিবনা না থাকার ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বালুরঘাটের শান্তি কলোনি এফপি স্কুলের উপর আশপাশের এলাকার পড়ুয়ারা নির্ভরশীল।
ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে এলেও স্কুলের পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, দিনে দিনে সমাজবিরোধীদের ডেরা হয়ে উঠছে এই স্কুল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় স্কুলের দরজায় তালা পড়ছে না। এর ফলে অবাধে স্কুল চত্বরে ঢুকে নেশার ঠেক বসাচ্ছে কয়েকজন। সকালে স্কুলে এসে দেখা যাচ্ছে, সিগারেটের পোড়া অংশ পড়ে রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, আগের রাতে এখানে আসর বসেছিল। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা মনোভাবকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এঁদের একজন সঞ্জিত বিশ্বাস ক্ষোভ উগড়ে বলেন, ‘স্কুলের গেট খোলা থাকায় রাত হলেই এখানে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা শুরু হয়। মদের বোতল, সিগারেটের প্যাকেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। একাধিকবার স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনও লাভ হয়নি।’ স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলের এই ঢিলেঢালা মনোভাবের নেপথ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুণ্ডুর সঙ্গে সহকারী শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীর বিবাদ চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। এর প্রভাব পড়ছে স্কুলের পঠনপাঠনে। এঁদের দু’জনের বক্তব্যে এই বিরোধ স্পষ্টই ধরা পড়ছে।
প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘ওই শিক্ষিকা ঠিক মতো কোনওদিন স্কুলে আসেন না। যেদিন আসেন, সেদিন ক্লাস নেন না। ক্লাস নিতে বললে চেঁচামেচি করেন।’ অভিযোগ খারিজ করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘বিনা কারণে প্রধান শিক্ষক আমার নামে ডিপিএসসি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। একের পর এক চিঠি পাঠাচ্ছেন। জানি না কেন এমন বৈরী মনোভাব দেখাচ্ছেন উনি।’
এই বিরোধের কথা পৌঁছেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে। এ ব্যাপারে সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। দুই শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য একটাই, দুই শিক্ষকের বিরোধের জেরে যেন স্কুল অসুরক্ষিত না হয়ে পড়ে। এতে শুধু স্কুল নয়, আশপাশের বাসিন্দারাও বহিরাগতদের আনাগোনায় আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন।