দিব্যেন্দু সরকার ■ আরামবাগ
ইদে সম্প্রীতির নজির ক্যান্সার আক্রান্ত হিন্দু ব্যবসায়ীর! রমজান মাসে এলাকার অসহায়, দরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনের মুখে হাসি ফোটাতে তুলে দিলেন নতুন উপহার। এর জন্য বাড়িতেই ‘দোকান’ খুলে বসেছেন হুগলির আরামবাগের ব্যবসায়ী অচিন্ত্য কুণ্ডু। যার নাম দিয়েছেন ‘আমাদের দোকান’। তবে এই দোকানে জিনিসপত্র কিনতে কোনও টাকা পয়সা লাগে না।
এখান থেকে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় নিজেদের পছন্দের জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। সেই দোকান থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন মানুষ নতুন শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি এবং জুতো নিয়ে গিয়েছেন। অচিন্ত্যের এই কর্মকাণ্ড দেখে তারিফ করছেন সবাই। আরামবাগ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কালিপুর এলাকার বাসিন্দা অচিন্ত্য জিভের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও সব সময় মানুষের বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরোপকারী মানুষ হিসাবেই তাঁকে সবাই চেনে। তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি পেশায় শিক্ষিকা এবং আরামবাগ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনিও স্বামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুূসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে ইদের উপহার তুলে দিচ্ছেন। ইদের আগে নতুন উপহার পেয়ে অনেকেই খুশি। পছন্দের শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি, জুতো সংগ্রহ করার জন্য কুণ্ডু বাড়িতে রীতিমতো লাইন পড়ছে। যাঁদের অনেকেরই কেনার ক্ষমতা নেই।
আনিসা বিবি, আসুরা বেগম, রিজিয়া বিবি, রেমা বিবি’রা জানাচ্ছেন, ইদের আগে যে ভাবে অচিন্ত্য এবং তাঁর স্ত্রী অসহায় মুসলিমদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে তাঁরা আপ্লুত। আনিসা বিবি’র কথায়, ‘আমাদের অত টাকা পয়সা নেই। ঠিক মতো সংসার চলে না। ইদের আগে অনেকেই নতুন জামা–কাপড় কেনে। কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। সেই অভাবটা বুঝতেই দিলেন না অচিন্ত্যদা এবং কাউন্সিলর দিদিমনি। আমরা আমাদের পছন্দের জিনিসপত্র ওনাদের দোকান থেকে সংগ্রহ করে নিয়েছি। অচিন্ত্যদা ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার পরেও উনি যে ভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ওনার প্রতি আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ।’
গরিব পরিবারগুলোর হাতে ইদের উপহার তুলে দিতে পেরে বেজায় খুশি অচিন্ত্য নিজেও। বলেন, ‘ইদের আগে অনেকেই কেনাকাটা করতে পারেন না। আমি তাঁদের হাতে সামান্য কিছু উপহার তুলে দিলাম। আমার স্ত্রী–ও প্রথম থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা আমাদের বাবা ও মায়ের স্মরণে এই উপহার সামগ্রী তুলে দিলাম। উপহার পেয়ে মানুষগুলো খুশি হয়েছে দেখে আমার মন ভরে গিয়েছে।’ তৃপ্তি বলেন, ‘মানুষের পাশে থাকাটাই তো আমাদের কাজ। স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবুও মনের জোরে মানুষের জন্য কাজ করে যান। এটা করেই উনি আনন্দ পান। এটাই আমার বড় পাওনা।’