সুপ্রকাশ চক্রবর্তী ■ হাওড়া
হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামার কারণে বিপর্যস্ত এলাকার জনজীবন। মাটি বসে গিয়ে ফাটল ধরেছে বহু বাড়ির দেওয়ালে। অনেক বাড়িঘর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। ফলে মাথার ছাদ হারিয়েছেন অনেকে। তাঁদের বেশিরভাগই খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলে। ভাঙা ঘরে আটকে রয়েছে ব্যাঙ্কের কাগজপত্র, জমির দলিল। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে স্কুলের বইপত্র, সাইকেল, টিভি, আলমারি। চুরি যাওয়ার ভয়ে ভাঙা ঘরের সামনে দিন রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকার মানুষজন। যারা স্কুলে পড়ে তাদের পড়াশনা সব লাটে উঠেছে। সব মিলিয়ে নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে দিন কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল হাওড়া পুরসভাকে জানিয়ে দিয়েছেন যেহেতু এলাকাটা আয়তনে অনেক বড় এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল জমা হয়ে রয়েছে তাই এখনই সেগুলোকে সরানো যাবে না। তাই ভাগাড়ের আশপাশে যে ফাঁকা জমি রয়েছে সেখানে জঞ্জাল সরানো যেতে পারে। এর ফলে নতুন করে গৃহহারা হওয়ার আশঙ্কা করছেন আশপাশের বাসিন্দারা। তাঁদের কেউ পেশায় দিনমজুর, কেউ আবার ভাগাড় থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করেন। ফলে ভাগাড়ের সঙ্গে তাঁদের রুটি–রুজিও জড়িয়ে রয়েছে।
সরকার থেকে অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়া হবে শুনে তাঁদের কেউ কেউ আশ্বস্ত হলেও অনেকেই অবশ্য কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। কারণ, দূরে চলে গেলে এখানে এসে আর কাজ করা সম্ভব হবে না। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এই সব মানুষদের। অনেকেরই আশঙ্কা, এক চিলতে বাসস্থানটা আর হয়তো কোনও দিন ফিরে পাবেন না। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন, এটা সরকারি জমি। সেখানেই ঘর বানিয়ে তাঁরা বছরের পর বছর বসবাস করতেন। তাঁদের অনেকেরই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড রয়েছে। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায়। অন্য জায়গায় পুনর্বাসন দিলে প্রত্যেকেই অসুবিধায় পড়বেন।
স্থানীয় গৃহবধূ পিঙ্কি সিং বলেন, ‘আমার পরিবারে চারজন সদস্য রয়েছে। একটা ছোট বাচ্চা আছে। ভাগাড়ের ময়লা কুড়িয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখান থেকে যদি চলে যেতে হয় তাহলে সেই রোজগার থাকবে না৷ তখন কী করে সংসার চালাব, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’
মমতা পাসোয়ান বলেন, ‘ছেলে–মেয়ে নিয়ে আমার পরিবারে মোট ছ’জন রয়েছে৷ স্বামী ময়লার গাড়িতে মাল তোলার কাজ করে। ধসে আমার বাড়ির দেওয়াল ফেটে গিয়েছে। অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এক চিলতে পাকার বাড়ি করেছিলাম। এখন গোটা পরিবার নিয়ে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছি। প্রশাসনের লোকেরা আসছে দেখছে চলে যাচ্ছে। আমাদের নিয়ে শুধু রাজনীতি হচ্ছে। আমাদের কী ভাবে চলবে, কেউ কিছু বলছে না।’
তাঁদেরই কেউ কেউ এদিন পুরমন্ত্রী ফিরাদ হাকিমকে কাছে পেয়ে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন। ফিরহাদ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি সরকার দেখছে। খুব তাড়াতাড়ি তা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ যাতে তাঁদের কাজের অসুবিধা না হয়, সেই দিকটাও দেখা হবে। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না সবহারা মানুষগুলো।