'তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয়', রাজ্যসভায় বললেন ঋতব্রত...
আজকাল | ২৬ মার্চ ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানালেন ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা নদীর জলবন্টন চুক্তি নবীকরণের আগে যেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ৩০ বছরের এই চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হতে চলেছে।
রাজ্যসভার সাংসদ আজ তাঁর ভাষণে তিস্তা নদীর চুক্তির উল্লেখ করে বলেন, উত্তরবঙ্গের তিস্তা নদীর 'স্বাস্থ্য' একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ সহ বিভিন্ন কারণে খারাপ হয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়া কেন্দ্র যেন তিস্তা নদীর জলবন্টন এবং ফরাক্কা দিয়ে গঙ্গা নদীর জলবন্টন চুক্তির নবীকরণ না করে।
ঋতব্রত নিজের ভাষণে বলেন, প্রায় ৪১৪ কিলোমিটার লম্বা তিস্তা নদী পশ্চিমবঙ্গের চারটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রার উপর এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। তাই তিস্তা জলবণ্টন ও ফরাক্কা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যেকোনও আলোচনার আগে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত গ্রহণ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, তিস্তায় জলের প্রবাহ কমে গেলে উত্তরবঙ্গের কৃষি-সেচ ব্যবস্থা ও পানীয় জলের যোগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই কারণে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। গত বেশ কিছু বছরে পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশে 'নদী ভূ-প্রকৃতি' পরিবর্তন হয়েছে। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গে আর আগের মতো জল পাওয়া যাচ্ছে না।
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেন, ফরাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জল দেওয়ার ফলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা সঙ্কটে পড়েছে এবং সুন্দরবন 'ব' দ্বীপের স্বাস্থ্যেও এর প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ ফরাক্কা জলবন্টন চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ফরাক্কা ব্যারাজে জলপ্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে কলকাতা বন্দরে নৌ-পরিবহনে সমস্যা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জল সঙ্কটে ভুগছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং তাঁদের জীবিকা হারিয়েছেন।'
এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ভারত-ভুটান নদী কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়ে বলেন, ভুটান থেকে প্রবাহিত নদীগুলির হরপা বানের কারণে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিনবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, ফরাক্কা ব্যারাজের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বন্যা ও ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে এবং অনুমান করা হচ্ছে, যদি এই জল বাংলাদেশকে দেওয়া হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেচের জলের অভাবে চরম সমস্যায় পড়বেন। তাই তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয়।'