নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: ‘এটা কার রে’? রাস্তার ধারে কারও বাড়ি পছন্দ হলেই এই বলে দাঁড়িয়ে পড়তেন তিনি। চোখ ঘুরিয়ে এক নিমেষেই দেখে নিতেন চার দেওয়াল। পছন্দ হলেই কিনে নিতেন। দাম? ‘তা নিয়ে ভাবতে হবে না আপনাকে’, পিঠ চাপড়ে তিনি বলতেন বাড়ির মালিককে। যেমন কথা, তেমন কাজও। বাজার দরের চেয়ে চড়া দরে কিনে নিতেন পছন্দের বাড়ি। শুধু বাড়ি বললে ভুল হবে, তাঁর তালিকায় ছিল বড় বাগান, দোকান, বিঘার পর বিঘার আস্ত জমিও। অশোকনগরে নাকি এমনই জমিদারি চাল ছিল মাছ ব্যবসায়ী নামে পরিচিত সুকুমার মৃধার! শুক্রবার ইডি’র হানার পর স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁর সম্পত্তি বিস্তারের কাহিনী পরপর আউড়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু, এত বছরে তাঁর টাকার উৎস নিয়ে কারও সন্দেহ হয়নি? স্থানীয়রা বলছেন, সন্দেহ হয়নি এমনটা নয়। কিন্তু, কেউ কিছু বলতেন না। তিনি যে বাংলাদেশি সেটা এলাকায় প্রায় সকলেই জানতেন। কারণ, প্রায়ই বাংলাদেশে যাতায়াতও করতেন সুকুমারবাবু। ভয়ের জন্যই কেউ টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে শত্রু হতে চাননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে অশোকনগরে এসেছিলেন সুকুমার মৃধা। মানিকনগরে তাঁর বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এলাকায় তাঁর পরিচয় ছিল, তিনি বড় মাছ ব্যবসায়ী। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে চলে যেতেন। অনেকদিন থাকতেন সেখানেই। তারপর আবার ফিরে আসতেন অশোকনগরে। স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশে তাঁর একটি এনজিও আছে। তার সুবাদে সেখানকার অনেক প্রভাবশালীদের সঙ্গেও নাকি তাঁর ওঠাবসা।
অশোকনগরের কালীতলায় সুকুমারের এক ভাগ্নে থাকেন। পাশাপাশি, অশোকনগরের নবজীবনপল্লিতে থাকেন তাঁর আরেক ঘনিষ্ট। এদিন সকালে ইডি’র আধিকারিকরা প্রথমে তাঁর ভাগ্নের বাড়িতে যান। তারপর যান নবজীবনপল্লির বাড়িতে। সেখান থেকে তাঁরা মানিকনগরে সুকুমারের বাড়িতে যান। স্থানীয়রাই জানান, বছর দু’য়েকের বেশি সময় ধরে তিনি এই বাড়িতে আসেননি। তবে, এক প্রতিবেশীর কাছে তাঁর বাড়ির চাবি ছিল। তা নিয়েই ভিতরে ঢোকেন ইডি’র আধিকারিকরা। বাড়িতে তল্লাশির খবর, চাপা ছিল না পাড়ায়। তাই এদিন চারপাশে ভিড়ও জমে গিয়েছিল। বাসিন্দাদের বিভিন্ন দাবি প্রসঙ্গে সুকুমার মৃধার পরিবারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও, কেউ মুখ খুলতে চাননি।
স্থানীয়রা বলেন, এখানে আসার পর থেকেই তিনি অনেক বাড়ি, জমি, বাগান, দোকান কিনেছেন। সেগুলি নিজের নামে, নাকি অন্য কারও নামে তা কেউ জানেন না। তবে, তিনি কারও বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই সকলে বুঝে যেতেন—আরও একটা কিনছেন!