• সেই পোশাকেই গ্রামে, বিরাট-স্পর্শে এখনও মগ্ন ঋতুপর্ণ
    এই সময় | ২৬ মার্চ ২০২৫
  • রূপক মজুমদার, বর্ধমান

    আদালতের সব কাজ সেরে বাবা–মায়ের সঙ্গে সোমবার অনেক রাতেই বাড়ি ফিরেছে জামালপুর ব্লকের পারাতল গ্রামের ঋতুপর্ণ পাখিরা। রাতে সে ভাবে প্রতিবেশীরা কেউ না এলেও, মঙ্গলবার সকাল থেকে পাড়ার অনেকেই এসেছিল কলকাতা থেকে ‘বিরাট’ কাজ করে ফেরা ছেলেটাকে দেখার জন্য। গায়ে–মাথায় হাত বুলিয়ে ‘বাবা বেঁচে থাক।’ বলেছেন পাড়ার কাকিমা–মাসিমারা। পাড়ার ছেলেরা এসে ঋতুপর্ণর মুখ থেকেই শুনতে চায় বিরাট–স্পর্শের সেই গল্প।

    না, গল্প নয়, সত্যি। গত শনিবার কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্সে বিরাট কোহলির পা ছুঁয়ে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে স্বপ্নপূরণ করেছে ঋতুপর্ণ। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এই ‘অপরাধ’ করে একরাতের হাজতবাস শেষে সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরেছে সে। মঙ্গলবার তাকে দেখতে এসে অনেকেই আগামী দিনে সাবধান থাকতে বলেন। তাঁদের কথা শুনতে শুনতেই ব্যাটবল নিয়ে বাড়ির উঠোনে খেলতে থাকেন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ঋতুপর্ণ।

    ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরার ফলের ব্যবসা। সামান্য একটু জমি রয়েছে তাঁর। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে সংসার টেনে নিয়ে যেতে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেন পাখিরা দম্পতি। মহাদেব বলেন, ‘ছোট থেকেই ছেলেটা খেলা পাগল। এমন একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিল যে সবাই এখন আমাদের ঘিরেই নানা প্রশ্ন করছে। যে ভাবেই হোক ছেলেটাকে এখন খেলা শেখাবই।’

    দুই দিদি পৌলমী ও প্রীতিও চায় ভাই ওর পছন্দের খেলা ক্রিকেট খেলেই জীবনে বড় হোক। প্রীতি বলেন, ‘থ্রি ইডিয়েট্‌স সিনেমায় একটা বিষয় দেখবেন বারেবারেই এসেছে, নিজের মন থেকে যে যা হতে চায় সেটা হতে দিলে সফলতা আসবেই। আমরা সবাই চাই, ভাই ওর স্বপ্নটা ক্রিকেট নিয়েই ভরিয়ে তুলুক বাস্তবেও। বাবা–মাকে আমরাও বলেছি, যে ভাবে হোক ওকে খেলাটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করানোর জন্য।’

    মা কাকলি পাখিরা বলেন, ‘সকাল থেকে অনেকেই এসেছেন বাড়িতে। প্রতিবেশীরা এসেছেন। অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন। এখন ছেলেকে বড় কোনও কোচিং সেন্টারে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়ে ওর স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করব আমরা।’

    কিং কোহলির ভক্তকে দেখতে আসা প্রতিবেশী সন্ধ্যা মালিক বলেন, ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। এ বার সুস্থ ভাবে ঘরেই থাকুক।’ গ্রামের বাসিন্দা শ্যামাপদ মালিক বলেন, ‘এই ছেলেটাই আমাদের গ্রামের নাম উজ্জ্বল করবে আগামী দিনে।’ জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মেহমুদ খানের কথায়, ‘আমরাও সবাই ওর পাশে থাকব।’

    আর যাকে ঘিরে এত কিছু সেই ঋতুপর্ণ এখনও সেই জামাটি খোলেনি তার গা থেকে। কারণ, বিরাট কোহলিকে সে যখন জড়িয়ে ধরেছিল তখন সে পরেছিল এই জামাটি। মাথার ব্যান্ডানা ঠেকেছিল বিরাটের পায়ে। সেটি এখনও ঋতুপর্ণর মাথায় বাঁধা। তার কথায়, ‘এই জামায় আমার ভগবানের গায়ের ঘাম লেগে রয়েছে। এই জামা আমি এখনই ছাড়ব না। এই ব্যান্ডানায় ভগবানের পায়ের ধুলো আছে। এগুলো আমি ফ্রেম করে রেখে দেবো। এটাই আমার জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় হয়ে থাকবে। একদিন আমিও আমার ভগবানের মতো দেশের হয়ে মাঠে নামব।’

  • Link to this news (এই সময়)