সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের জেরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ও মধ্য হাওড়া এবং শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট চলছে। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে পাইপ লাইন সারানোর পর জল সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও জমা জলের নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে বেলগাছিয়া এবং তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের।
তার মধ্যেই নতুন এক সমস্যার মুখোমুখি হলেন হাওড়াবাসী। ধসের জেরে বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলার কাজ থমকে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে হাওড় শহরে সাফাইয়ের কাজ বন্ধ রেখেছে পুরসভা। ফলে সমস্ত ভ্যাটে জঞ্জাল উপচে পড়ছে। তাতে দুর্বিষহ অবস্থা হয়েছে সাধারণ মানুষের।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আপাতত শহরের জঞ্জাল বেলগাছিয়া ভাগাড়ের পরিবর্তে আরুপাড়ায় ফেলা হবে। মঙ্গলবার রাত থেকেই জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
সোমবার বেলগাছিয়া ভাগাড় পরিদর্শনে এসে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, এখানে আর নতুন করে জঞ্জাল ফেলা হবে না। সেখানে যে জঞ্জালের পাহাড় রয়েছে সেটিকে ধাপে ধাপে সরানো হবে। সেই মতো বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জঞ্জাল ফেলার কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে পুরসভা। তার বিকল্প হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে আরুপাড়াকে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এর আগেও শিবপুরের আরুপাড়ায় জঞ্জাল ফেলার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাতে বাধা দেন। স্থানীয় মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় বিধায়ক মনোজ তিওয়ারিও এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারই জেরে আরুপাড়ায় জঞ্জাল ফেলার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখন আবার নতুন করে আরুপাড়ায় জঞ্জাল ফেলতে গেলে এলাকার মানুষ বিষয়টি ভালো ভাবে নেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ পুরকর্তারাই। সুজয় চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করেছেন, এখন আর কোনও সমস্যা নেই। এ বার থেকে শিবপুরের আরুপাড়াতেই জঞ্জাল ফেলা হবে।
বেলগাছিয়া ভাগাড়ে জঞ্জালের পাহাড়ে গত বুধবার রাতে ভয়াবহ ধস নামে। এর ফলে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। ফাটল দেখা দেয় পানীয় জলের সরবরাহ লাইনে। আবর্জনা জমে নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাখ্যা, প্রতিদিন বেলগাছিয়া ভাগাড়ে প্রায় ২৫০ লরি জঞ্জাল ফেলা হয়। ধস নামার পর নীচের মাটি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে তার ওজন নেওয়ার ক্ষমতাও কমেছে।
এই অবস্থায় বেলগাছিয়া ভাগাড়ে নতুন করে জঞ্জাল ফেলতে গেলে ধস আরও বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখে মঙ্গলবার সকাল থেকে জঞ্জাল বোঝাই লরি বেলগাছিয়া ভাগাড়ে পাঠানো হচ্ছে না। জঞ্জাল সাফাই না হওয়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা।
বামুনগাছির বাসিন্দা পূজা শর্মা বলেন, ‘এমনিতেই সি রোড এলাকায় নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। তার উপর এদিন ভ্যাট থেকে কোনও জঞ্জাল ওঠেনি। ফলে গন্ধ টেকা যাচ্ছে না। তার উপর আবার এলাকায় এখনও জল জমে রয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের দুর্বিষহ অবস্থা।’
বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের কারনে পানীয় জলের পাইপ ফেটে গেলেও বিকল্প পাইপ লাইন দিয়ে উত্তর হাওড়ায় জল সরবরাহ চালু করেছে হাওড়া পুরনিগম। অনেক জায়গায় জলের গাড়িও পাঠানো হচ্ছে। যদিও বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, যে জল আসছে সেটা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
বামুনগাছি ও শালকিয়ার অনেক জায়গায় পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন এলাকার মানুষ। নোংরা জলের উপর দিয়ে অনেক দূর থেকে পানীয় জল আনতে হচ্ছে তাঁদেরকে। কেউ আবার দোকান থেকে জল কিনে খাচ্ছেন। রাস্তার জমা জল সরাতে পুরসভার তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পাম্প বসানো হয়েছে। তার পরেও জমা জলের দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছে না।