কান্দির প্রাচীন রুদ্রদেব মন্দিরে গাজন উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে
বর্তমান | ২৬ মার্চ ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: কান্দির প্রাচীন রুদ্রদেব মন্দিরে গাজন উৎসবের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মন্দির চত্বর রং করা থেকে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গোটা চত্বর সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি কান্দি পুরসভার পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক সহ মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে নজরদারিও চালানো হবে। কয়েকশো বছরের প্রাচীন এই রুদ্রদেব মন্দির। প্রতিবছর ১৯ চৈত্র থেকে শুরু হয় গাজন উৎসব। চলে বাংলা বছরের শেষদিন পর্যন্ত। টানা ১১দিন ধরে চলে এই উৎসব। কয়েক হাজার ভক্ত হাজির হন। মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি রাতে ভক্তরা বিশেষ শিবনৃত্য করে থাকেন। প্রতিদিন রাত ১২টায় বাবা মহেশ্বরকে মন্দির থেকে বারান্দায় ভক্তদের সামনে আনা হয়। এরপর মহেশ্বরকে সামনে রেখে অসংখ্য ভক্ত বিশেষ শিবনৃত্য প্রদর্শন করেন। ভোরের দিকে বাবাকে আবারও মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবেই চলতে থাকে ১১দিন। প্রতি রাতে ঢাক-ঢোল ও সানাইয়ের সুরে এলাকা গমগম করে।
কমিটি সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, উৎসবের প্রথমদিনে একশ্রেণির ভক্ত কাঁটা নৃত্য প্রদর্শন করেন। অর্থাৎ কুলের বা বাবলার কাঁটা নিয়ে নৃত্য প্রশর্দন করা হয়। এর পরদিন জিরেন অর্থাৎ জিরিয়ে নেওয়া বা বিরতি। জিরেনের দিন কোনওরকম নৃত্য প্রদর্শন হয় না। এইভাবে মধুভাঙা নৃত্য অর্থাৎ বিভিন্ন ফুল নিয়ে নৃত্য করা হয় বাবার সামনে। সিদ্বিভাঙা নৃত্যে সিদ্ধিগাছের ডাল নিয়ে নৃত্য করা হয়। গোয়ালনামা নৃত্যে বোলান গান করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে গাজনের দিনগুলিতে প্রতিরাতে হাজারের বেশি দর্শনার্থী হাজির হন। ভোর পর্যন্ত মন্দির চত্বর দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। ওইসব দর্শনার্থীর যাতে গাজনের সময় কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়, সেই কারণে মন্দির কমিটি ও কান্দি পুরসভার পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এবছর গোটা মন্দির চত্বর কার্যত সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে। অতিরিক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। প্রতিবছরের মতোন এবছরও গাজনের আগে মন্দিরগুলির রং করা হচ্ছে। ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অধীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই মন্দিরের গাজন উৎসব বহু প্রাচীন। হাজার হাজার ভক্তের আগমন হয়ে থাকে। সেই কারণে গাজনের আগে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ তরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, গাজন উৎসবে শুধু স্থানীয় নয়, বহু দূর থেকে ভক্তরা হাজির হন। তাই সকলের নিরাপত্তা সহ কোনও বিপত্তি এড়াতে প্রস্তুতি চলছে। কান্দি পুরসভার চেয়ারম্যান জয়দেব ঘটক বলেন, রুদ্রদেব মন্দিরের গাজন শহরের সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই পুরসভার দায়িত্বও বেশি। আমরা সর্তক রয়েছি।